ক্রিকেট নিয়ে আমার যতটুকু মেধা আছে, একসঙ্গে কাজ করলে উন্নতি করতে পারব
বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবর। কনসার্ট নিয়ে বর্তমানে অবস্থান করছেন আমেরিকায়। এ মাসের শেষ দিকে ফিরবেন দেশে। এরই মধ্যে তিনি হয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক। নিজে একসময় ক্রিকেট খেলতেন। ক্রিকেট অন্তপ্রাণ আসিফের বিসিবির পরিচালক হওয়া, রাজনীতি ও গান নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তারেক আনন্দ
কুমিল্লা লিগে খেলেছেন স্কুলজীবন থেকেই, ঢাকা প্রথম বিভাগ লিগেও ক্রিকেট খেলেছেন। আসিফ আকবর গানের মানুষ হয়েও সব সময় ক্রিকেট অন্তপ্রাণ। বিসিবির সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত কখন নিলেন?
অন্তর্বর্তী সরকার প্রত্যেক জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে নতুনভাবে সাজিয়েছে এবং অ্যাডহক কমিটি করেছিল। প্রথম দিকে আমি অ্যাডহক কমিটিতে ছিলাম না। পরে আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় ফোন করে বললেন, আপনাকে অ্যাডহক কমিটিতে থাকতে হবে। বিসিবির কাউন্সিলর হিসেবে আপনাকে ঢাকায় পাঠাতে চাই। আমার নাম যখন কাউন্সিলর হিসেবে গেল, তখন ভাবলাম, যদি কাউন্সিলর হই তাহলে আমার ক্ষমতা আরেকটু বাড়ানোর জন্য (যেহেতু ১১টা জেলা আমার আছে) আমি আরও ব্যাপক পরিসরে কাজ করতে পারব, পরিচালক হলে অসুবিধা নেই। তখন আমি পরিচালকের চিন্তা করলাম এবং নির্বাচনে দাঁড়ালাম।
আমেরিকায় বসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার খবর জানার পর কেমন লাগছে?
এটা ঠিক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলা যাবে না, কারণ আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ব্যারিস্টার মীর হেলাল। আমি তাকে ফোন দিয়েছিলাম আমার ভোট চাওয়ার জন্য। উনাকে ফোন দেওয়ার পর উনি কোনো কিছু বলার সুযোগ আমাকে দেননি। তিনি বলেছেন আসিফ ভাই আমিও ক্রিকেটার, আপনিও ক্রিকেটার। আপনি থাকলে যা, আমি থাকলেও তা। বরং এটা ইনডিসেন্ট দেখায়, আমি দাঁড়াব আপনার সঙ্গে, ইলেকশন করব এটা ভালো দেখায় না। আমি সকালে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেব, আপনার জন্য শুভকামনা রইল। বিসিবির পরিচালক হওয়া নিঃসন্দেহে বড় ব্যাপার। যেহেতু আমি ক্রিকেটের মানুষ। ক্রিকেটের মানুষ হিসেবে আমি ক্রিকেটের জন্য কিছু করতে পারলে আমার ভালো লাগবে। আশা করি এখন সুযোগ আসছে সেই কাজটা করার। ভালো লাগার সঙ্গে ভালো কাজ করার প্রত্যয় আছে।
বিসিবির এবারের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, সরে গেছেন তামিম ইকবালসহ আরও অনেকে। এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
বিসিবি নির্বাচন যখন হচ্ছে তখন আমি আমেরিকায়। তামিম ইকবালের সরে দাঁড়ানো কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। ও যদি ইলেকশন করত, করতে পারত। ও যদি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হতো, তাও আমরা তার সঙ্গে কাজ করতাম। তামিম ইকবাল বাংলাদেশের সম্পদ। আমার মনে হয় ইলেকশন বয়কট করা, আবার ফিরে আসার চেষ্টা করা, আবার বয়কট করা, এটা হয়তো তার মধ্যে স্পেশাল আবেগ কাজ করেছে কিংবা তার যারা উপদেষ্টা লেভেলে ছিলেন, তারা তাকে ঠিকমতো গাইড করতে পারেননি। এ জন্য তামিম ইকবালের মধ্যে কনফিউশন তৈরি হয়েছে। তামিম ইকবালের সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। সে বাংলাদেশ টিমের সব চাইতে ড্যাশিং এবং সফল ওপেনার। তামিম ইকবাল ফুরিয়ে যায়নি। তাকে আমাদের প্রয়োজন, লাগবে। এবং তামিমকে আমরা চাইব, আমাদের কাজে যেন সে থাকে। সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে।
আসিফ আকবর স্পষ্টবাদী মানুষ। ন্যায়ের সঙ্গে চলেন, অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেন না। বিসিবির সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে যদি কখনও দেখেন অন্যায় হচ্ছে, তখন কী করবেন?
আসলে আমি দায়িত্ব বুঝে নিইনি। আমার তো ধারণা আছে যে, জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলো কীভাবে চলে। বিসিবি কীভাবে চলে। মোটামুটি একটা ধারণা আছে। ৩৫-৩৬ বছর যাবৎ এই অ্যারেনার সঙ্গে সংযুক্ত। এখানে কীভাবে কাজ হয়, কীভাবে কাজ করলে ভালো হয়, কেন কাজগুলো হয় না। কোন কোন কাজে অন্যায় হয়, কী কী আপস, কোথায় করতে হয়, এগুলো আমি মোটামুটি জানি। সে ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, আমার যতটুকু ক্রিকেট জ্ঞান বা মেধা আছে সেটার সঙ্গে যারা নতুন ডিরেক্টর হয়েছেন, একসঙ্গে কাজ করলে ক্রিকেটের উন্নতি করতে পারব।
আমাদের দেশের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা নেই, ক্রিকেটের উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।
প্রাথমিকভাবে ১১ জেলার সঙ্গে কথা হয়েছে, পাশাপাশি আমি আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে দুদিন আগে কথা বললাম। কিছু ক্রিকেট পাগল মানুষ বোর্ডে চলে আসছে। ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য পারস্পরিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং জরুরি। জেলা পর্যায়ের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করব। জেলা লিগগুলো হতে হবে এবং আমাদের ফার্স্ট ডিভিশন লিগের সঙ্গে সেকেন্ড ডিভিশন কোয়ালিফাইং এবং সেই সঙ্গে রেলিগেশন সিস্টেম; যে যে ম্যাচ, টিম ভালো খেলবে না তারা রেলিগেটেড হয়ে যাবে। আমাদের ক্লাবগুলোতে ফিন্যান্স বাড়াতে হবে। সংগঠকের কোনো অভাব নেই, সমস্যা হচ্ছে তারা কাজ করার সুযোগ পায়নি। যে কারণে নতুন সংগঠক তৈরি হয়নি, পুরনো সংগঠকরা বিমুখ হয়েছে। আমাদের কাজ হচ্ছে সংগঠকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং খেলা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন লেভেলে কী কী প্রতিবন্ধকতা আমরা এতদিন ফেস করেছি, ফাইন্ড আউট করে কাজ করতে চাই।
আরও পড়ুন:
ফের জুটি হলেন মম-শ্যামল
কনসার্ট নিয়ে এই মুহূর্তে আমেরিকায় আছেন। বাংলা গানের যুবরাজ যেখানেই যান, সেখানেই দর্শকের উন্মাদনা। এবারের কনসার্ট কতটা উপভোগ করছেন?
কনসার্ট ভালোই হচ্ছে। আমাদের লাগাতার আরও কিছু কনসার্ট আছে। এখানে দর্শকদের মধ্যে ভালো রেসপন্সও পেয়েছি। কনসার্ট আমাদের পেশা। এখানে উপভোগ করতেই হবে। অনেক দিন ধরে দেশের বাইরে আছি এটা একটা অস্বস্তিকর। এত লম্বা সফরে আমি কখনও যাইনি। যা-ই হোক ২৬ অক্টোবর ভার্জিনিয়া শোর মাধ্যমে আমাদের আমেরিকার ট্যুর শেষ হবে। এরপর দেশে ফিরে আসব ইনশাল্লাহ।
বিসিবির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল আসিফ আকবরের নাম। তাহলে কি শ্রোতারা গানের আসিফ আকবরকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় আছে? গানে আপনাকে নিয়মিত কি পাওয়া যাবে?
একদমই না। গান আমার পেশা। গানের আসিফকে হারিয়ে ফেলার কোনো সুযোগ নেই। আমি এখন কনসার্ট শুরু করেছি। গত ১৬-১৭ বছর যে কনসার্টগুলো করতে পারিনি সেগুলো করার অপশন আমার কাছে চলে আসছে। কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত আছি। তবে রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে আমি খুব চুজি। এখন হয়তো আগের মতো র্যান্ডমলি রেকর্ড করব না। গানের সুর, কথা দেখে গাইব। কনসার্টটা বন্ধ থাকার কারণে রেকর্ডিংয়ে মনোযোগ দিতে হতো বেশি। রেকর্ডিং ছিল আমার একমাত্র ইনকাম। এখন কনসার্ট ওপেন হয়ে যাওয়াতে কনসার্টে মনোযোগ দিচ্ছি। পাশাপাশি ভালো গান, ভালো কথার, ভালো সুরের কিছু গান করতে চাই। অনেক গান গাইতে হবে এমন চিন্তাভাবনা নেই। ভালো গান পেলে ডেফিনেটলি কাজ করব। গানের সঙ্গে ক্রিকেটের কোনো কনফ্লিক্ট নেই। সব সময় তো শো থাকবে না। হয়তো মাসে দুইটা তিনটা শো থাকবে। বাকি সময়টা আমি খেলা নিয়ে থাকতে পারব আশা করি।
রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন দীর্ঘদিন, আমরা কি ধরে নেব আসিফ আকবর বিসিবি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেন, এরপর মেইনস্ট্রিম রাজনীতিতে সক্রিয় হতে যাচ্ছেন?
আরও পড়ুন:
মারা গেলেন পরীমনির নানা
রাজনীতির বাইরে তো আমরা কেউ না। আর মেইনস্ট্রিম বলতে যেটা আপনি বোঝাতে চাচ্ছেন সেটা হচ্ছে এই বিএনপি। বিএনপির সঙ্গে তো আমার সম্পর্ক আজন্ম। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যেটা হয়েছে, ২০১১ সালে বিশেষ কারণে আমি দল থেকে রিজাইন করি। ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমি দলের কার্যক্রমে ছিলাম সমর্থক হিসেবে। ফিউচারে যদি দল আমাকে মনে করে ডাকবে এবং আমার যদি পছন্দ হয় তাদের কার্যক্রম, ডেফিনেটলি আমি তাদের সঙ্গে কাজ করব। তবে এই বিসিবির সম্পর্কের সঙ্গে কিংবা আমার গানের সঙ্গে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। আর মেইনস্ট্রিম রাজনীতি বলতে যেটা বোঝায় এমপি বা মন্ত্রী হওয়া, এ ধরনের রাজনীতি আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, আমি জাতীয়তাবাদী দল করি, সমর্থন করি। দলের জন্য ভালো চিন্তা করি। দল যদি ভালো করে তাহলে ভালো লাগবে। আর দল যদি পারফেক্ট না হয়, এই জুলাই বিপ্লবের ফলাফলটা আমরা উপভোগ করতে চাচ্ছিলাম, সেটা যদি না পারি আমি আবারও আমার পুরনো ভূমিকায় থাকব। প্রটেস্টের মধ্যে থাকব। আমি যেমন ছিলাম তেমনই থাকব।