মানুষ-বেজির বন্ধুত্ব, ভালোবেসে নাম রেখেছেন লালু

শালিখা (মাগুরা) প্রতিনিধি
০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:০৪
শেয়ার :
মানুষ-বেজির বন্ধুত্ব, ভালোবেসে নাম রেখেছেন লালু

বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে—কথাটি ধ্রুব সত্য হলেও এখানের চিত্রটি ভিন্ন। সভ্যতার অগ্রগতিতে যখন বন্য প্রাণীদের অস্তিত্ব সংকট চলছে, ঠিক তখনই বেজির সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা। সাধারণত এসব প্রাণী মানুষকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের কুল্লিয়া গ্রামে ঘটেছে ব্যতিক্রম এক ঘটনা। ভ্যান ও সাইকেলের মেকানিক মো. সাত্তার মোল্লার সঙ্গে একটি বেজির বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। যা এখন পুরো এলাকায় আলোচনার বিষয়।

জানা গেছে, প্রায় দুই বছর আগে গ্রামের পুকুরপাড়ে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকা একটি বেজি ছানা দেখতে পান সাত্তার মোল্লা। প্রাণীটির প্রতি তার মায়া হয়। পরে বাড়িতে এনে স্থানীয়ভাবে পরিচর্যা করে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলেন প্রাণীটিকে। তখন থেকেই প্রাণীটি তার সঙ্গে রয়েছে।

বেজির সঙ্গে আপনার সখ্যতা হলো কিভাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে সাত্তার মোল্লা বলেন, ‘আমার বাড়ির পুকুর পাড়ে একটা বেজি ছানা অসুস্থ অবস্থায় পেয়েছিলাম। তারপরে সেখান থেকে তুলে এনে প্রথমে খাচায় রেখে প্রাণীটিকে পুরোপুরি সুস্থ করেছি। ভেবেছিলাম বন্যপ্রাণী বনে থাকাই ভালো। তাই একাধিকবার ছেড়েও দিয়েছি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো বারবার প্রাণীটি ফিরে এসেছে আমার কাছে।’

এই থেকে প্রাণী সঙ্গে শুরু হয়েছে তার ভালোবাসা। তাই প্রাণীটির নামও রেখেছেন সাত্তার মোল্লা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভালোবেসে তার নাম রেখেছি লালু। লালু নামে ডাকলেই সে যেখানেই থাকে সেখান থেকে আমার কাছে ছুটে আসে। লালুর সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। লালু আমাকে ছেড়ে যেতে পারে না, আমিও লালুকে ছাড়তে পারি না। লালুর মায়ায় জাড়ায়ে গেছি। এখন প্রাণীটি পুরোপুরি বড় হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষের ক্ষতি করে না। বরং দিনের বেশির ভাগ সময় আমার দোকানের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়।’

প্রাণীটির খাবার দাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন বাজার থেকে মাছ, মাংস, দুধ এবং কখনো কলা এনে বেজিটিকে খাওয়ানো হয়। আমি একজন সাধারণ সাইকেল মেকানিক। এই উপার্জনের অর্থ দিয়েই আমার পরিবার চলে। তারপরও বেজিটার পেছনে আমার অনেক অর্থ ও শ্রম ব্যয় হয়।’

সাত্তার মোল্লা আরও বলেন, ‘শুরুর দিকে পরিবারের লোকজন বেজি পালনে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাদের আশঙ্কা ছিল প্রাণীটি হয়ত এক সময় ক্ষতি করতে পারে। তবে এখন পরিবারও প্রাণীটির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। পরিবারের সদস্যরা আগে নিরুৎসাহিত করত। এখন তারাও খাওয়ায়, আদর করে প্রাণীটিকে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্রামের অনেক মানুষ সাত্তারের দোকানে ভিড় করেন, শুধু বেজিটিকে একনজর দেখার জন্য। কেউ ছবি তোলেন, কেউ ভিডিও করেন। কারও কারও বিস্ময়—বেজি সাধারণত হিংস্র প্রাণী, কিন্তু এই বেজি আচরণে শান্ত।

রহিতোষ বিশ্বাস নামের এক স্থানীয় বলেন, ‘কুল্লিয়া বাজারে মেকানিক সাত্তার ভাই একটি বেজি পালন করেন। সেই বেজির সাথে তার খুব বন্ধুত্ব। এ রকম বিষয় আমরা আগে কখনো দেখি নাই। সাত্তার ভাইয়ের সাথে বেজির বন্ধুত্ব দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ সাত্তার ভাইয়ের দোকানো ভিড় করে।’

সজিব হাসান নামের আরেকজন বলেন, ‘বেজি সাধারণত মানুষের ক্ষতি করে বা কামড় দেয়। কিন্তু এই লালু নামের বেজিটা একেবারেই আলাদা। সাত্তারের সঙ্গে ওর সত্যিকারের বন্ধুত্ব হয়েছে। লালু বেজিটা আশপাশের লোকজনসহ সত্তারের পারিবারেরও কোনো ক্ষতি করেনি। মানুষের সাথে বন্যপ্রাণীর বন্ধুত্বের বিষয়টা আমরা খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করি। আমাদের কাছে খুব ভালো লাগে।’

শ্রীপুরের বাসিন্দা জাবেদ মাহমুদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বেজি এবং মানুষের বন্ধুত্বের বিষয়টি জানতে পেরে এক নজর দেখার জন্য ছুটে এসেছেন সাত্তারের দোকানে। তিনি বলেন, ‘মানুষ আর প্রাণীর এই সম্পর্ক সত্যিই অদ্ভুত। বিষয়টা আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি খুব উপভোগ করেছি। তাদের ভালোবাসা অটুট থাকুক।’