বান্দরবানে ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’ উৎসব শুরু
বান্দরবানে আজ রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ‘মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে’, যা সারাবিশ্বে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা নামেও পরিচিত। তিন দিনব্যাপী এই উৎসবে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনে মুখর হয়ে উঠবে পার্বত্য জেলা বান্দরবান।
উৎসব উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী এবারের আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ মঙ্গল রথযাত্রা। রাজহংসী আকৃতির বিশাল রথে বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করে তা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেওয়া হবে। রথের সঙ্গে থাকবে ভয়ঙ্কর আকৃতির পুতুল ও বর্ণিল শোভাযাত্রা। ভক্তরা প্রদীপ হাতে ধর্মীয় দেশনা গান পরিবেশন করবেন।
আগামী ৬ অক্টোবর রাতে শহরের বিভিন্ন পাড়ায় হবে পিঠা উৎসব। তরুণ-তরুণীরা দলবেঁধে পিঠা তৈরি করবে, যা ভোরে ভগবান বুদ্ধের উদ্দেশ্যে দান করা হবে এবং পরে প্রতিবেশীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার আমাদের সময়কে বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল টিম, গোয়েন্দা নজরদারি ও সাদা পোশাকের সদস্য মোতায়েন থাকবে। তিনি বলেন, বান্দরবান এমন একটি জেলা, যেখানে পাহাড়ি-বাঙালি মিলে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। তাই উৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী। বৌদ্ধ বিহারগুলোর ভান্তেরা জানান, প্রাচীনকাল থেকেই বর্ষাবাস (উপোস) শেষে আশ্বিনী পূর্ণিমায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে এই উৎসব পালন করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী গৌতম বুদ্ধ এই দিনে তার মাথার চুল আকাশে নিক্ষেপ করেছিলেন। সেই স্মরণে ভক্তরা শত শত রঙিন ফানুস আকাশে উড়িয়ে ভগবান বুদ্ধকে উৎসর্গ করেন।
উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানের বিভিন্ন বিহারে চলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ফানুস তৈরি ও রথ সাজানোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। শহরের রাজা মাঠ, স্বর্ণমন্দির, উজানীপাড়া, বালাঘাটাসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে প্রস্তুতির ব্যস্ততা।
উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি চনুমং মারমা জানান, ৫ অক্টোবর রাজা মাঠে গুরু ভান্তেদের দেশনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা উপস্থিত থাকবেন। তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে এখন শুধু ধর্মীয় উৎসব নয় এটি পাহাড়ের সম্প্রীতি, ঐক্য ও সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।