‘কৈফিয়ত’ দিলেন ফারুকী
শিল্পী-সাহিত্যিকদের মৃত্যুর পর তাদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা কিংবা জীবদ্দশায় তাদের জন্য কেন কিছু করা হয় না- এসব বিষয়ে ‘কৈফিয়ত’ দিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
আজ শনিবার বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টে এই নির্মাতা লিখেছেন, ‘আমার বন্ধুদের একজনের একটা লেখা আমার নজরে এসেছে। যার আসল বক্তব্য হচ্ছে এই যে, শিল্পী-সাহিত্যিকদের মৃত্যুর পর কেন উদযাপন করা হয়? জীবদ্দশায় তাদের জন্য কিছু করা হয় না কেন? আহমদ রফিকের মৃত্যু প্রসঙ্গে এই ভ্যালিড প্রশ্নটা সে তুলেছে। এটা আরও অনেকেরই প্রশ্ন হওয়া স্বাভাবিক। এই প্রশ্ন আমরাও সব সময়ই করতাম।’
এরপর ফারুকী বলেন, ‘প্রথমে আহমদ রফিকের প্রসঙ্গে একটু কৈফিয়ত দিই। আহমদ রফিকের জীবিত অবস্থায়ই আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। আমাদের একটা বড় পরিকল্পনা হচ্ছে বাংলাদেশি কিংবদন্তিদের জীবন এবং কাজ সেলিব্রেট করা। এটা শুরু হবে স্থানীয় পর্যায়ে। ধীরে ধীরে এটা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাবে। এটার জন্য একটা ক্যালেন্ডার করছে শিল্পকলা একাডেমি এবং এই অনুষ্ঠানগুলো যেন বোরিং এবং অপ্রাসঙ্গিক সরকারি অনুষ্ঠানে পর্যবসিত না হয়, সেটা মাথায় রেখে প্রোগ্রাম কিউরেশনে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। যেমন সলিমুল্লাহ খান আর ব্রাত্য রাইসুকে উদযাপনের প্রোগ্রাম কিউরেশন এক হতে পারে না।’
আরও পড়ুন:
ওটিটি প্ল্যাটফরম আমার জন্য বেশ লাকি
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘যা-ই হোক ক্যালেন্ডার তৈরি হতে হতে আমরা বসে থাকছি না। আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। কয় দিন আগে সাবিনা ইয়াসমিন আপাকে নিয়ে আমরা এ রকম একটা কাজ করেছিলাম। সেখানে শিল্পী খুরশিদ আলম ভাই বলেই ফেলেছেন এ রকম আয়োজন তিনি আগে দেখেননি। অক্টোবরের ৮ তারিখে উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মদিন উপলক্ষে আমরা লালবাগ কেল্লায় একটা ধ্রুপদী সন্ধ্যার আয়োজন করেছি, যেখানে এই প্রজন্মের শিল্পীরাও পারফর্ম করবেন। পাশাপাশি তার ছেলে আলী আকবর খাঁ সাহেবের নাতি সিরাজ খাঁ সাহেব দেশে আসছেন ওই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমাদের মাঝে আছেন আর যারা চলে গেছেন তাদের সবাইকেই আমরা উদযাপন করব। এবং সেটা শিল্প-সংস্কৃতির সব শাখার মায়েস্ত্রোদের জন্যই প্রযোজ্য। বদরুদ্দীন উমর যেমন থাকবেন, সেলিম আল দীন থাকবেন, রক লেজেন্ড জেমস ভাইও থাকবেন, তারেক মাসুদও থাকবেন, এস এম সুলতানও থাকবেন, নাসির আলী মামুনও থাকবেন, আরও অনেকেই থাকবেন। এই তালিকায় আহমদ রফিক ভাইও আছেন। আমরা চেয়েছিলাম তিনি বেঁচে থাকতেই একটা আয়োজন করতে। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে যখন আমরা যাই তাকে দেখতে, তখন বুঝেছিলাম দুর্ভাগ্যজনক হলেও তার শারীরিক অবস্থা এ রকম আয়োজনে যোগ দেওয়ার মতো না। পাশাপাশি আরেকটা কথা বলা দরকার। যেটা আমরা কখনোই বলতে চাই নাই। তিনি অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই অনেকেই আমাকে লিখেছেন আমরা কেন কিছু করছি না। অর্থনৈতিক দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে। আমি শুধু এইটুকু বলতে চাই, সরকার তার দায়িত্ব সর্বোচ্চ পালন করেছে। ফেব্রুয়ারিতেও করেছে, এখনো করেছে। কিন্তু শিল্পী-সাহিত্যিকদের সাহায্য করে ফটো তুলে প্রচার করাটা আমাদের কাছে অসম্মানজনক মনে হয়েছে বিধায় আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর যাদের যাদের পাশে দাঁড়িয়েছি সেগুলো কোনোটাই প্রচার করিনি। আজকেও করতাম না, কিন্তু কেউ কেউ অভিযোগ করাতে বলতে হলো।’
আরও পড়ুন:
নানাকে নিয়ে পরীর আবেগঘন পোস্ট
নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ফারুকী বলেন, ‘আমরা অল্প দিনের সরকার। সব কিছু বদলানো সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা করছি যতটুকু সম্ভব ভূমিকা রাখতে। কালচারাল ইনক্লুসিভনেস, জুলাই ন্যারেটিভ নিয়ে কাজ আমরা সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে করার চেষ্টা করেছি। সামনে শিল্পকলা একাডেমি গান এবং নাচের স্কুলের ব্যাপারে কিছু বড় উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। একাডেমিতে নতুন বিভাগ আসবে। ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম, থিয়েটার, মিউজিক ফেস্টিভাল নিয়ে কাজ হচ্ছে। বিয়েনালকে রিভাইটালাইজ করার কাজ চলছে। ইট টেকস টাইম। আমরা শুরু করে দিয়ে যাচ্ছি। পরবর্তী সরকার এসে এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর আমিও মুক্তি পাব এই কঠিন দায়িত্ব থেকে। আমার নিজের ছবি না বানানোর চেয়ে বড় যন্ত্রণা আর কিছু নেই।’