সংসদের প্রথম ছয় মাসে সংস্কার বাস্তবায়ন প্রস্তাব
কয়েক দফা সংলাপের পর সংস্কার প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্টসহ রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হলেও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে এখনও সুরাহা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের আইন বিশেষজ্ঞরা একের পর এক বিকল্প পরামর্শ দিচ্ছেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে আদালতের পরামর্শের পর এবার ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা, যার গঠন প্রক্রিয়া হবে অধ্যাদেশের মাধ্যমে। এসব পরামর্শ ও প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আগামী ৫ অক্টোবর ফের সংলাপ করবে কমিশন। তবে কমিশনের এই প্রস্তাবও আইনসিদ্ধ নয় বলে মনে করছেন কোনো কোনো আইনজীবী।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক আমাদের সময়কে বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের জন্য অধ্যাদেশ জারি আইনি বিধানের মধ্যে নেই। এখন কেউ মতামত দিতেই পারেন, তবে আইনের চোখে ব্যাখ্যার ভিত্তি নেই। তিনি আরও বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিমকোর্ট মতামত দেবে। সেটি তো মানতে কেউ বাধ্য নয়। এ ছাড়া কোনো ডকুমেন্টের ব্যাপারে মতামত চাওয়া যায় না। সুনির্দিষ্ট আইনি প্রশ্নে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়, যা এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে দেশের ইতিহাসে দুই বার নেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, গণপরিষদ; ১৮০ দিনের সংবিধান সংস্কার পরিষদ; এগুলো আইনের মধ্যে নেই।
সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এসেছে বলে জানান ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই আলোচনা করে সমাধান বের করার কথা। দেখা যাক তারা কী করে। আগামী ৫ অক্টোবর আলোচনায় সমাধান আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
জানা গেছে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করেছে কমিশন। সেখানে একাধিক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে একাধিক পরামর্শের মধ্যে রয়েছে- সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের মতামত নেওয়া, সংসদ নির্বাচনের দিন সংবিধান সংস্কারের জন্য গণভোট এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করে সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়ন করা।
সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে কমিশনের বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। সেখানে কার্যক্রম বর্ণনা করা থাকেবে। আগামী সংসদ নির্বাচনের গঠিত সংসদের প্রথম ছয় মাস সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই সময়ের মধ্যে সাংবিধানিক সংস্কারসহ সব সংস্কারের আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে। নির্বাচিত দল/সদস্যরা সেই অধ্যাদেশ পাস না করলে কী হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটমেন্ট থাকবে। এ নিয়ে আলোচনা হবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
জানা গেছে, আগামী ৫ অক্টোবর দলগুলোর সঙ্গে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক করবে। সেখানে একাধিক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। সেই সংলাপ থেকেই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর ঐকমত্য সমাধান প্রত্যাশা করছে কমিশন। সেই অনুসারে সরকারের কাছে সুপারিশ করবে কমিশন। আগামী ১৫ অক্টোবর শেষ হচ্ছে ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ। এর মধ্যেই কার্যক্রম শেষ করতে চায় তারা।
সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফার বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করতে পারে। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। এরপর আদেশটি নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যেতে পারে। তবে এই প্রস্তাবে দলগুলোর মধ্যে কোনো ঐকমত্য হয়নি।
বিএনপি বলেছে- রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে সাংবিধানিক সংস্কার করার আইন সুযোগ নেই। কেন না, পরবর্তীতে আইনি চ্যালেঞ্জ করলে এই সাংবিধানিক আদেশের সংস্কার আদালতে টিকবে না। এরপরও কমিশন চাইলে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে যেভাবে এই সরকার গঠন করা হয়েছে, তেমনি সাংবিধানিক আদেশে সংস্কারের বিষয়ে মতামত নিতে পারে। অন্যদিকে জামায়াতের দাবি- সাংবিধানিক আদেশের মৌলিক সংস্কার এবং সেই আলোকে সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট। অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাংবিধানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করে আসছে। বিশেষ আদেশে সাংবিধানিক সংস্কারে বাম দলগুলোরও আপত্তি রয়েছে।