ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক আর নেই
ভাষা সংগ্রামী, কবি, প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ আহমদ রফিক আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না এলাহি রাজিউন)। রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১২ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। বারডেম হাসপাতাল থেকে আমাদের সময়ের নির্বাহী সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক এহ্সান মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, মৃত ঘোষণা করার সাত মিনিট আগে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
এর আগে গত রোববার আহমদ রফিককে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বারডেম হাসপাতালে নেওয়া হয়।
গত ১১ সেপ্টেম্বর তাকে হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ১২ সেপ্টেম্বর এ হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই তার ৯৭তম জন্মবার্ষিকী কাটে। তার আগে এক মাসে দুই দফা ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্রনিক কিডনি ফেইলিওর, আলঝেইমার্স রোগ, পারকিনসন্স রোগ, ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স, বেডশোর, ফুসফুসের সংক্রমণে ভুগছিলেন আহমদ রফিক।
আহমদ রফিকের দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসছিল ২০১৯ সাল থেকেই। সে বছর চোখে অস্ত্রোপচার করলেও অবস্থার বেশি হেরফের হয়নি; ২০২৩ সাল থেকে প্রায় দৃষ্টিহীন। এ ছাড়া ২০২১ সালে পড়ে গিয়ে পা ভাঙার পর থেকেই আহমদ রফিকের শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না।
১৯২৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুর গ্রামে জন্ম এ ভাষাসৈনিকের। মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর রসায়নে পড়তে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ফজলুল হক হলের আবাসিক সুবিধা না পাওয়ায় পরে ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেল কলেজে।
১৯৫২ সালে তৃতীয়বর্ষে পড়ার সময় ফজলুল হক হল, ঢাকা হল এবং মিটফোর্ডের ছাত্রদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলার কাজ করেছেন তিনি। পাশাপাশি সভা-সমাবেশ মিছিলে ছিলেন নিয়মিত।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
১৯৫৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আন্দোলনকারী ছাত্রদের মাঝে একমাত্র তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
১৯৫৫ সালের শেষ দিকে প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসে পড়াশোনায় ফেরেন আহমদ রফিক। এমবিবিএস ডিগ্রি নিলেও চিকিৎসকের পেশায় যাননি।
১৯৫৮ সালেই আহমেদ রফিকের প্রথম প্রবন্ধের বই ‘শিল্প সংস্কৃতি জীবন’ প্রকাশ হয়। তারপর লেখালেখিতেই জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন।
আহমদ রফিকের স্ত্রী মারা গেছেন ২০০৬ সালে। তিনি নিঃসন্তান। নিজের লেখা ও সংগ্রহ করা বিস্তর বই ছাড়া সম্পদ বলতে তেমন কিছু নেই। কবিতা, প্রবন্ধ, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, গবেষণা মিলিয়ে তার লিখিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক।
রবীন্দ্রবিশেষজ্ঞ হিসেবে আহমদ রফিক দুই বাংলায় অগ্রগণ্য। একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বহু পুরস্কার ও পদক পেয়েছেন তিনি। কলকাতার টেগর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পেয়েছেন ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি।