বৈরী আবহাওয়াতেও কক্সবাজারে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের কারণে কক্সবাজারে বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। একদিকে সতর্ক সংকেত অন্যদিকে উত্তাল সমুদ্র। এসব পাত্তা না দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটি কাটাতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন হাজারো পর্যটক।
এবারের দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে লম্বা ছুটি পেয়েছেন চাকরিজীবীরা। ফলে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের সমাগমে কক্সবাজারের হোটেল ও মোটেলের রুম ‘সোল্ড আউট’ হয়ে গেছে। এমনকি পাওয়া যাচ্ছে না গাড়ি ও ট্রেনের টিকেটও।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পর্যটকদের হয়রানি বন্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করছে কয়েকটি টিম।
গত দুই সপ্তাহ আগে থেকে কক্সবাজারের সবগুলো হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস বুকিং হয়ে যায়। অনেকেই পরিকল্পনা থাকলেও সিট না পেয়ে কক্সবাজারে আসতে পারেনি।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই পরিকল্পনা করে কক্সবাজার এসেছি। তারপরেও চার তারিখে ফিরতি টিকেট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে নন এসি বাসের টিকেট ব্যবস্থা করেছি। তবে পরিবার নিয়ে খুব ভালো সময় কেটেছে।’
ঢাকা থেকে আসা আরেক পর্যটক ফখরুল আলম বলেন, ‘এবার কক্সবাজার এসে রুম পেতে অনেক কষ্ট হয়েছে। আসার পর থেকেই বৃষ্টি, সমুদ্রে সতর্ক সংকেত তারপরেও এই বৈরী আবহাওয়াতে ভালো লেগেছে।’
বৈরী আবহাওয়াতে সৈকতে বাড়তি আনন্দ যুগিয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট থেকে আসা খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন পর ছুটি পাওয়ায় পরিবার নিয়ে এখানে এসেছি। মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন ইনানির একটি হোটেলে খুব ভালো সময় কাটছে।’
রাজধানী ঢাকায় চাকরি করেন মোহনা সেন। এই নারী পর্যটক বলেন, ‘অফিসের কাজের ফাঁকে কক্সবাজার এসে বৃষ্টি ও উত্তাল সাগরের ঢেউ দেখে অনেক মজা পেলাম। বৃষ্টিতে ভিজেছি। অনেকদিন পর বৃষ্টি আর সাগরের পানি একসাথে পেয়ে দারুন লেগেছে।’
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও, ইনানী হিমছড়ি পাটোয়ারটেক, টেকনাফ, সাফারি পার্ক, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ মন্দিরসহ নানা স্পটে ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্যটকরা।
খুলনা থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন পর্যটক দম্পতি শরিফা ও রহমান তারেক। তারা বলেন, ‘সাগরে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বড় ঢেউ দেখতে পেয়েছি। প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে অনুভব করার সুযোগ হয়েছে।’
তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু হোটেলে খাবারের দাম একটু বেশি বলে মনে হয়েছে।’
হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের ৪ শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মালিকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন পঁচা বাসি খাবার বিক্রি না করে। একই সঙ্গে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় না করে।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘কয়েকদিন আগে থেকেই আমাদের সব হোটেলের রুম বুকিং হয়ে গেছে। আগামী চার তারিখ পর্যন্ত কোথাও রুম খালি নেই। টানা ছুটির কারণে বিপুল পর্যটক এসেছেন। তবে আমরা হোটেল মালিকদের বলেছি- যেন কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করে।’
হোটেল কক্স টুডের জিএম আবু তালেব বলেন, ‘আগামী ৮ তারিখ পর্যন্ত কোনো রুম খালি নেই। অনেক গেস্টকে আমরা জায়গা দিতে পারেনি। বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও এবারের ছুটিতে বিপুল পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে।’
এদিকে টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।’
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও অনেক পর্যটক এসেছেন। আগত পর্যটকরা যাতে কোনো প্রকার হয়রানি শিকার না হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসনের তিনটি টিম।’
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তল থাকার পাশাপাশি বাড়তি থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।’