স্লুইস গেট বন্ধ, সেন্টমার্টিনে পানিবন্দি কয়েকশ পরিবার

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:১০
শেয়ার :
স্লুইস গেট বন্ধ, সেন্টমার্টিনে পানিবন্দি কয়েকশ পরিবার

বৈরী আবহাওয়া ও টানা বৃষ্টিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দ্বীপের স্থানীয় এক বিএনপি নেতা স্লুইস গেট বন্ধ করে দেওয়ায় সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। এদিকে সাগর উত্তাল থাকায় দুইদিন ধরে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচলও।

বাসিন্দারা জানান, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টি চলছে সেন্টমার্টিনে। জোয়ারের কারণে বেড়েছে ঢেউ। এতে আশ্রয়স্থল নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।

সেন্টমার্টিন ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুইদিন ধরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে দ্বীপের পাঁচটি গ্রামের কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জোয়ারের আঘাতে ঘাটে নোঙরে থাকা একটি ফিশিং ট্রলারও ডুবে গেছে।’

‎তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় এক ব্যক্তি পানি চলাচলের স্লুইস গেট বন্ধ করে দেওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি।’

রাইসুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ‘ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম বহু বছরের পুরনো ১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডের একমাত্র পানি চলাচলের পথ স্লুইস গেট বন্ধ করে রেখেছেন। এ কারণেই বৃষ্টির পানি জমে আছে।’

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপি নেতা আবুল কালাম বলেন, ‘আমি কোনো স্লুইস গেট বন্ধ করিনি। আমার পাশের বাড়ির খলিল নামে এক ব্যক্তি সীমানা দিতে গিয়ে স্লুইস গেটটি বন্ধ করেছে। আমরা সবাই মিলে সেটি খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’

‎এদিকে দুপুরের দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত এখনও চলমান। এতে দ্বীপের পূর্বপাড়া, পশ্চিম পাড়া, মাঝের পাড়া, নজরুল পাড়া ও কোনা পাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানকার দুইশ ঘরবাড়ি এখনও পানিবন্দি হয়ে আছে।

মাঝেরপাড়ার ভুক্তভোগী বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে আমরা পানিবন্দি হয়ে আছি। পরিবারের সদস্যদের অন্যত্র পাঠিয়ে ঘরে অবস্থান করছি। সারাদিন পরিবারের কেউ পেটে খাবার দিতে পারিনি। রান্না করার মতো কোনো পরিবেশ নেই।’

‎জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন ইউপি সদস্য আল নোমান বলেন, ‘টানা বৃষ্টির পানি জমে থাকায় আমার এলাকায় দেড়শোর বেশি ঘরবাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আর স্লুইস গেট থেকে পানি বের হতে না পারায় ভোগান্তি বেড়েছে। স্লুইস গেটের মেরামতের জন্য বারবার বলা হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।’

‎টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে বেশকিছু ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। মূলত স্লুইস গেট বন্ধ থাকায় এ ধরনের সমস্যা হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি চলাচলের জন্য স্লুইস গেট খুলে দিতে বলা হয়েছে। বৃষ্টি থামলে আশা করি পানিও নেমে যাবে। এরপরও আমরা পানিবন্দি মানুষদের খোঁজ-খবর রাখছি। পাশাপাশি সাগর উত্তাল থাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে বন্ধ রয়েছে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌযান চলাচলও।’