নোয়াখালী বিভাগ চেয়ে সড়ক অবরোধ

সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
০২ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:৪৯
শেয়ার :
নোয়াখালী বিভাগ চেয়ে সড়ক অবরোধ

নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলা। আঞ্চলিক স্বার্থ ও ন্যায্য দাবির পক্ষে স্লোগানে মুখরিত হয়ে পড়ে সোনাইমুড়ী বাইপাস এলাকা। হাজার হাজার মানুষ ব্যানার-ফেস্টুন ও জাতীয় পতাকা হাতে সকাল ৯টার দিকে সড়কে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে পুরো এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে।

‘নোয়াখালী বিভাগ চাই’ দাবিকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই অবরোধ কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী সদর ও রামগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ এই সংযোগপথ অবরোধের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

অবরোধকারীদের ভাষ্যমতে, নোয়াখালী শুধুমাত্র একটি জেলা নয়, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী জনপদ যা প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক দিক দিয়ে অনেক আগেই একটি বিভাগ হওয়ার সব যোগ্যতা অর্জন করেছে।

স্থানীয় কলেজশিক্ষক মোহাম্মদ জাফর বলেন, ‘নোয়াখালী বিভাগ শুধুই আবেগ নয়, এটি একটি বাস্তব প্রয়োজন। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, দ্রুত সেবা ও উন্নয়নের স্বার্থেই এই বিভাগ সময়ের দাবি। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সেই ন্যায্য দাবিই জানাচ্ছি।’

অবরোধের কারণে বিকল্প কোনো রুট না থাকায় স্থানীয় যাত্রীদের পাশাপাশি দূরপাল্লার যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, পণ্যবাহী ট্রাক ও গণপরিবহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে সোনাইমুড়ী বাইপাসে।

লক্ষ্মীপুর থেকে ছেড়ে ঢাকাগামী যাত্রী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, দাবি যৌক্তিক হতে পারে, কিন্তু যাত্রীদের দুর্ভোগ যেন না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।

নোয়াখালীর বিশাল প্রবাসী জনগোষ্ঠীও এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবজুড়ে। ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত নোয়াখালীবাসীরাও ভিডিও বার্তা ও স্ট্যাটাসের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন।

 

যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেলিফোনে নোয়াখালী বিভাগের দাবিতে মোহাম্মদ দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘নোয়াখালী একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ। এটি বিভাগ হলে চট্টগ্রামের ওপর চাপ কমবে এবং নতুন বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার যদি এই দাবিকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করে, তাহলে এটি শুধু নোয়াখালীর নয়, গোটা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।’

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নোয়াখালী বিভাগের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আর রাষ্ট্র যদি এই আঞ্চলিক স্বার্থ এর ভাষা বোঝে, তবে নোয়াখালী বিভাগ বাস্তবায়ন খুব বেশি দূরে নয়।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, কোনো ধরনের সহিংসতা হয়নি, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মানুষের প্রতিবাদের ভাষা আমরা শ্রদ্ধা করি। তবে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। আলোচনা চলছে।’

প্রসঙ্গত, নোয়াখালী বিভাগ গঠনের দাবি নতুন নয়। গত দুই দশকে একাধিকবার এই দাবি আলোচনায় এসেছে। নোয়াখালীর সঙ্গে লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলা প্রশাসনিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় অনেক দিন ধরেই এই তিন জেলাকে নিয়ে একটি নতুন বিভাগ গঠনের প্রস্তাব বিভিন্ন মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বর্তমানে বিভাগীয় পর্যায়ের অনেক সেবা চট্টগ্রাম থেকে নিতে হয়, যা সময় ও খরচসাপেক্ষ। ফলে দ্রুত প্রশাসনিক সেবা, শিক্ষাগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের স্বার্থে এখানকার জনগণ বিভাগ গঠনকে সময়োপযোগী বলে মনে করছেন।