স্বস্তি ফিরছে খাগড়াছড়িতে, যান চলাচল স্বাভাবিক
টানা চার দিন পর খাগড়াছড়িতে স্বস্তি ফিরতে শুরু করছে। দাবি পূরণের আশ্বাস ও দুর্গাপূজা উপলক্ষে অবরোধ স্থগিত হওয়ায় আজ বুধবার সকাল থেকেই দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। খুলতে শুরু করেছে দোকানপাট। তবে এখনো জেলা সদর, পৌরসভা ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে।
অবরোধ স্থগিতের পর খাগড়াছড়ি-ঢাকা, খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন দূরপাল্লার সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। অনেকে দুর্গাপূজার ছুটিতে বাড়ি ফিরছেন। যারা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন তারও গন্তব্যে ফিরছেন। শহরে বেড়েছে মানুষের উপস্থিতি। অচলাবস্থা কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে শহরের পরিবেশ।
এর আগে এক বিজ্ঞপ্তিতে দুর্গোৎসবের প্রতি সম্মান এবং প্রশাসনের আট দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসের প্রতি সম্মান জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১১টা থেকে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করে জুম্ম ছাত্র-জনতা।
তবে জেলা সদর ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকলেও দোকানপাট খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাসান মারুফ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম সব অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘মেডিকেল রিপোর্টে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত কথিত ধর্ষণের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অথচ এই অপপ্রচারের জাল বুনে পরিকল্পিতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করে তিনজন মারমা যুবকের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগে শয়ন শীল, নিরাপরাধ এক যুবক জেল হাজতে। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্য, বাঙালি ও পাহাড়ি নাগরিকসহ অনেকে আহত হয়েছেন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট, ঘরবাড়ি। লুটপাট হয়েছে সাধারণ মানুষের জীবিকা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নৃশংস পরিস্থিতির দায়ভার কে নেবে? পাহাড়কে অচল করে দেওয়া, মানুষের সহাবস্থানের পরিবেশ ধ্বংস করা, নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করা—এসব অপরাধকে কোনোভাবেই আড়াল করা যাবে না। দায়ভার নিতে হবে অবৈধ অস্ত্রধারী উপজাতি উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোকেই, যারা শান্ত পাহাড়কে রক্তাক্ত করে তুলেছে।’
মারমা ঐক্য পরিষদের সভাপতি মংখই মারমা বলেন, ‘পাহাড় আমাদের সবার। মিলেমিশে থাকতে চাই। সংঘাত চাই না।’
এদিকে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানিয়েছে সিভিল সার্জন সাবের আহম্মেদ। এই ঘটনার মেডিকেল বোর্ড গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রতিবেদন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে।
তবে অবরোধ চলাকালে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত সহিংসতায় খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় তিনজন নিহত হন এবং অনেকেই আহত হয়েছেন। গুইমারার রামসু বাজারসহ স্থানীয় অনেক দোকানপাট, বসতবাড়ি ও সরকারি অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। অথচ মিথ্যা একটা অভিযোগ তুলে পাহাড়কে জ্বালাও পুড়াও কর্মসূচি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড করে অশান্ত করে তুলেছে। যারা এই চক্রান্ত করে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাসান মারুফ বলেন, ‘এখনো ১৪৪ ধারা জারি আছে। যেহেতু পূজা চলছে তাই মানুষের যাতায়াতকে বাধাগ্রস্ত করছি না। পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শীঘ্রই ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার সিন্ধান্ত আসতে পারে।’
খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা জানান, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে এবং কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে ওই কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওইদিন রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় একটি ক্ষেত থেকে তাকে উদ্ধার করেন স্বজনরা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। পরদিন সেনাবাহিনীর সহায়তায় সন্দেহভাজন যুবক শয়ন শীলকে (১৯) আটক করে পুলিশ। তাকে ছয়দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।