রংপুরে ৯ জনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত
রংপুরের দুই উপজেলায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গের রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জেলার পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলায় ৯ জনের শরীরের এই রোগ শনাক্ত করেছে।
এদিকে কাউনিয়া উপজেলার ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এখনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গত আগস্টে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে ২ জন মারা যান। একই সময়ে এই রোগে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে অনেক মানুষ আক্রান্ত হন। এসময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা শেষে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পরে আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। যার মধ্যে ৮ জনের শরীর অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।
রংপুর জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক আরবিন্দু কুমার মোদক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে পীরগাছা উপজেলার ১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ জন ও মিঠাপুকুর উপজেলার ৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার ৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট আসলে সেখানেও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে কিনা বোঝা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। উপজেলাগুলোতে আমাদের স্বাস্থ্য সহকারীদের নমুনা সংগ্রহের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আইইডিসিআর। আক্রান্তের খবর পেলেই তারা নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরকে পাঠাচ্ছে। অ্যানথ্রাক্স সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার কাজও অব্যাহত রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।’
এদিকে আইইডিসিআরের সূত্র বলছে, ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে, এমন একজন ছাগলের মাংসের সংস্পর্শে এসেছেন এমন কথাও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের তেমন সংক্রমণ ছিল না আগে। গরুর পাশাপাশি ছাগলের মাংসেরও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শনাক্ত হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য অনুযায়ী, অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে এখন পর্যন্ত উপজেলাটিতে শতাধিক রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গাতেও চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত বলেন, ‘কিছুদিন আগে আক্রান্ত এলাকায় মেডিকেল টিম গিয়েছিল, যারা আক্রান্ত, তারা যাতে শঙ্কিত না হন, এ জন্য তাদের সচেতন করতে কাজ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে আক্রান্তদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়েছেন। আর যেন কেউ আক্রান্ত না হন সে জন্য আমরা কঠোর নজরদারি রেখেছি।’
অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এলে মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ গবাদিপশু থেকে মানুষে ছড়ালেও মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। মানুষের শরীরে এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে চামড়ায় ঘা সৃষ্টি হওয়া। এ জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগকে গরু-ছাগলের প্রতিষেধক টিকা কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন রুহুল আমিন বলেন, ‘যারা আক্রান্ত, তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসার জন্য যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন, তার পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। এ সংক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ভালোভাবে দিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রোগটা যেহেতু প্রাণী থেকে আসে, এটা প্রতিরোধে মূল কাজ হচ্ছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের।’
রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, ‘জেলায় ১৩ লাখের বেশি গরু, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। গত ২৬ আগস্টের পর থেকে এই রোগ প্রতিরোধে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। এখন পর্যন্ত পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও রংপুর সদরে ১ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশুকে অ্যানথ্যাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে ছাগলের মাংসে অ্যানথ্রাক্স শনাক্তের বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন জানাননি বলে দাবি করে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বলেন, ‘ছাগল অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের হার খুব কম। তবে অ্যানথ্যাক্স নিয়ে আতঙ্কের কারণ নেই। প্রাণিসম্পদ বিভাগ হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’