পূজার মৌসুমেও ছন্দে নেই ঢাকের বাণিজ্য
হতাশ সময় পার করছেন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা ।। বিনিয়োগের অর্থ তুলতেই হিমশিম
সারা বছর কম-বেশি চাহিদা থাকলেও দুর্গোৎসবে ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, ঘণ্টি ও করতালের মতো দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের বিক্রি বাড়ে। তাই এই মৌসুম ঘিরে বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুতে বাড়তি বিনিয়োগ করেন কারিগর ও ব্যবসায়ীরা। এবারও ভালো বাণিজ্যের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। কিন্তু দুর্গাপূজার অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ, সেই ঢাকের কারিগরদের মনে বিষাদের বাজনা। বাজার মন্দা যাওয়ায় তাদের হতাশ হতে হয়েছে। তারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম বাড়েনি, তবু বিক্রি কম। এমন পরিস্থিতিতে লাভ দুরে থাক, বিনিয়োগের অর্থ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও বিক্রির জন্য নামডাক রয়েছে রাজধানীর শাঁখারীবাজারের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার কারিগর ও ব্যবসায়ীরা অনেকটা অলস সময় পার করছেন। তারা জানান, দুর্গোৎসবের এই সময়েও বাড়তি বাণিজ্যের বদলে চলছে ঢিলেঢালা বেচাবিক্রি। সাধারণত পূজার মাসখানেক আগে থেকে বেচাবিক্রি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এবার অর্ডার অনেক কমে গেছে।
শাঁখারীবাজারে বাদ্যযন্ত্রের প্রবীণ কারিগর বিজয় দাস বলেন, বছরের এই সময়টাতে ঢাকাসহ ঢাকার বাইরেরও প্রচুর অর্ডার পাওয়া যায়। এতে মহাজনের বাড়তি ব্যবসা এবং আমাদেরও কাজের চাপ থাকে। কিন্তু এবার অর্ডার নেই বললেই চলে। তাই ব্যস্ততাও কম।
এখানকার ৫২ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান নিউ বাদ্য ভা-ারের কর্ণধার অমূল্য চন্দ্র দাস বলেন, অতীতে পূজার মৌসুমে ঢাক, মৃদঙ্গসহ চার লাখ টাকার বাদ্যযন্ত্রও বিক্রি করেছি। সেখানে এ বছর কত টাকা বিক্রি করেছি সেটা নেই বা শুনলেন। এমন সময়ে অন্তত ১৫টি ঢাক বিক্রি করে ফেলি। এবার এখন পর্যন্ত মাত্র ৭টি বিক্রি করতে পেরেছি। দৈনিক ২০ হাজার টাকারও বিক্রি নেই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জমকালো আয়োজন কম, তাই বিক্রিও কম। সামনের দিনগুলোতে বিক্রি খুব একটা বাড়বে বলে মনে হচ্ছে না। আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা, সেভাবেই বিনিয়োগ করেছি। কিন্তু এক লাখ টাকা বিক্রি হবে কিনা, তাও অনিশ্চিত। এখন বিনিয়োগের টাকা ওঠাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
শাঁখারীবাজারের ঢাক, ঢোল ও মৃদঙ্গের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সুর বিতানের ব্যবসায়ী সুবল দাস বলেন, এ বছর ঢাক ও মৃদঙ্গের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। তারপরও বিক্রি হচ্ছে না। এই সময়ে দুর্গোৎসবের আগেই অনেক অর্ডার পেতাম। এবার সেখানে হাতেগোনা কয়েকটা অর্ডার পেয়েছি। এভাবে চললে বেশিদিন ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তার মতে, বর্তমানে মানুষের টাকার অভাব এবং দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আয়োজনের পরিধি কমেছে। এর প্রভাব বাদ্যযন্ত্র বিক্রির ওপর পড়েছে। বিক্রি বাড়াতে লাভ কম হলেও দাম বাড়াইনি। তাতেও লাভ হচ্ছে না।
এখানকার বিক্রেতারা জানান, এবার ঢাক ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধরণ ভেদে এর চেয়ে বেশি দামেরও রয়েছে। মৃদঙ্গের দাম ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা। আর ঢোল, ঘণ্টি, করতাল, হারমোনিয়ামসহ অন্যান্য দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের দাম আগের মতোই রয়েছে।
শাঁখারীবাজারে গতকাল মৃদঙ্গ কিনতে এসেছিলেন সরস্বতী সম্প্রদায় কীর্তন দলের সনাতন সাহা গোস্বামী। কথা হলে তিনি বলেন, এখন আর আগের মতো আসরের আয়োজন নেই। ছোট পরিসরে হচ্ছে। ফলে কীর্তন দল টিকিয়ে রাখতেই কষ্ট হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
রাজধানীর অন্যতম পুরাতন বাদ্যযন্ত্রের প্রতিষ্ঠান ঢাকা মিউজিকের কর্ণধার বিধু সরকারও এবারের ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন, শুধু পূজার সময় নয়, বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ও জুন-জুলাই সময়ে ব্যবসা বাড়ে আমাদের। এখন দিন যত যাচ্ছে বিশেষ করে দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা ও বিক্রি দুটোই কমে যাচ্ছে। বিষয়টা এমন নয় যে, দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি কমেছে। দেশীয় বাদ্যযন্ত্রগুলোর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু বিক্রি নেই। এবার তাই পূজা মৌসুম ঘিরে বাড়তি বিনিয়োগ করিনি। পুরনো প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের নিয়মিত কিছু ক্রেতা রয়েছে। এখন তারাও কম আসছেন। আগে বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদিরও একটা বাজার ছিল। সেখানেও বিক্রি কমেছে।