হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সচেতনতা ও করণীয়
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হলো বিশ্ব হৃদরোগ দিবস। মূল উদ্দেশ্য ছিল, হৃদরোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘উড়হ’ঃ গরংং ধ ইবধঃ’. অর্থাৎ হৃদয়ের কোনো সংকেত অবহেলা করা ঠিক নয়।
হার্ট অ্যাটাক, চিকিৎসা পরিভাষায় যাকে বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, এটি একটি আকস্মিক ও জটিল হৃদসংক্রান্ত অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে হৃদপেশির কোনো অংশে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট অংশটি পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেয়ে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটি একটি জীবনঘাতী জরুরি অবস্থা, যা নির্ভুল ও দ্রুত চিকিৎসা না পেলে প্রাণঘাতী হতে পারে। এ রোগের সবচেয়ে প্রচলিত কারণ হলো, করোনারি ধমনিতে ফ্যাট, কোলেস্টেরল ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের আস্তর জমে এক ধরনের প্লাক তৈরি হওয়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্লাক যখন ফেটে যায়, তখন সেখানে রক্ত জমাট বাঁধে এবং সেই জমাট বাধা রক্ত ধমনির মধ্যে রক্তপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। ফলে হৃদপেশির একটি নির্দিষ্ট অংশ অক্সিজেনহীন হয়ে পড়ে এবং কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে আছেন এমন অনেকে নিজের অজান্তে প্রতিদিন সেই ঝুঁকি বহন করছেন, বিশেষ করে যারা উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরলে ভুগছেন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, নিয়মিত ধূমপান করেন কিংবা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন, যাদের ওজন অতিরিক্ত বা যারা দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকেন, তাদের মধ্যে এ রোগের আশঙ্কা বেশি। পারিবারিকভাবে যদি কারও হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তবে সেটিও একটি বড় ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান।
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সাধারণত খুব তীব্র ও তাৎক্ষণিক হয়। তবে অনেকেই এগুলোকে অবহেলা করেন। সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বুকে ভারী চাপ বা জ্বালাপোড়া জাতীয় ব্যথা, যা বাম বাহু, ঘাড় বা চোয়ালের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে; হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া; শরীর ঘেমে ভিজে যাওয়া; বমিভাব, মাথা ঘোরা বা এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া পর্যন্ত হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে একমুহূর্ত দেরি না করে রোগীকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে এই রোগ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছেÑ ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে জমাট বাঁধা রক্ত গলিয়ে ধমনি খুলে দেওয়া। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট বসিয়ে বন্ধ ধমনি খুলে দেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ পুনঃচালু করার। চিকিৎসা যত দ্রুত শুরু করা যায়, ততই হৃদপেশিকে বাঁচানো সম্ভব হয়, রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও বাড়ে।
তবে চিকিৎসার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিরোধ। হৃদয় সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা উচিত। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। কম চর্বি ও লবণযুক্ত, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করতে হবে। নিয়মিত নিজের রক্তচাপ, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি মানসিক চাপ কমিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। আজকের প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে প্রযুক্তিকে শারীরিক ক্ষতির কারণ না বানিয়ে বরং সেটিকে স্বাস্থ্যরক্ষার একটি সহায়ক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
লেখক : অধ্যাপক এবং কার্ডিওলজি, হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
চেম্বার : সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
১২/৩ নিউ সার্কুলার রোড, মালিবাগ, ঢাকা। হটলাইন : ০১৯২৭৩৩৩০০০
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন