রাজশাহী ওয়াসার পাইপলাইনের জন্য কাটা হচ্ছে গাছ

রাজশাহী ব্যুরো
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:১৬
শেয়ার :
রাজশাহী ওয়াসার পাইপলাইনের জন্য কাটা হচ্ছে গাছ

চীনের অর্থায়নে পদ্মা নদী থেকে রাজশাহী নগরীতে পানি আনার জন্য ২৬ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। গোদাগাড়ীর পদ্মা নদী থেকে এই পানি আনা হবে।

৪ হাজার ৬২ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ওয়াসা। ‘পানি শোধনাগার’ শীর্ষক এই প্রকল্পের ট্রান্সমিশন পাইপলাইন স্থাপনের জন্য কাটতে হচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) থেকে রোপণ করা ৩০৬টি গাছ। রাজশাহী-গোদাগাড়ী সড়কের দুই পাশে বেড়ে ওঠা গাছগুলো ছাতার মতো ছায়া দিয়ে আসছে। এখন উত্তর পাশের তিন কিলোমিটার এলাকার গাছ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের পাইপলাইন স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। রাস্তার পাশে সওজের যেটুকু জমি ছাড়া আছে, তাতেই পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। যেখানে জায়গা কম হচ্ছে, সেখানে গাছ কেটে পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে।

রাজশাহী পরিবেশ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. নাজমুল হোসেন বলেন, একটি লটের গাছমাত্র কাটা হয়েছে। তাদের দাবি, বাকি গাছগুলো বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা হোক। চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের জন্য সামান্য একটু জমি অধিগ্রহণ না করে গাছের ওপরই কেন হামলা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাকি গাছগুলো প্রকৃতিতে থাকবে। প্রয়োজনে প্রাণ-প্রকৃতিকে রক্ষার জন্য তারা আন্দোলনে নামবেন।

সওজ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে নতুন কসবা খোকার বাড়ি, কসবা গোরস্থান, এইচবিবি রাস্তার পাশ পর্যন্ত সড়কের ডান পাশে (উত্তর পাশের) গাছ নম্বর ০১ থেকে ৩০৬ নম্বর পর্যন্ত কড়ই, মেহগনি, আকাশমণিসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। রাজশাহী নগরীর শালবাগান সড়কের ১ থেকে ১১২ নম্বর পর্যন্ত গাছগুলো নিলাম করা হয়েছে। নিলাম মূল্য ১৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।

গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী গ্রামের শিক্ষক এস এম তিতুমীর রাস্তার পাশে গাছ কাটা দেখে বলেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ী এলাকা এমনিতে ক্ষরাপ্রবণ ও আবহাওয়া রুক্ষ। এই গাছগুলো পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই আবহাওয়ার মধ্যে সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় পথচারীরা শীতল ছায়ার পরশ পান। এখন রাস্তার এক পাশের গাছ কাটার কারণে মরুভূমির মতো দেখাচ্ছে।

এস এম তিতুমীর বলেন, ‘আমাদের দেশের সব উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ থাকে, কিন্তু প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। উন্নয়নের প্রথম শর্তই যেন গাছকাটা। রাস্তার পাশে পাইপলাইন বসানোর জায়গা না থাকলে জমি অধিগ্রহণ করা উচিত। এখনো যে গাছগুলো আছে, সেগুলো রক্ষা করা জরুরি।’

রাজশাহী ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, পাইপ বসানোর জন্য পাঁচ মিটার জায়গার ও ভেহিকেল ঢোকাতে মোট ১১ মিটার জায়গার দরকার। সওজের রাস্তার সব জায়গায় সমান জায়গা ছাড়া নেই। এখন পাইপলাইন তো আর এপার–ওপার নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। তারা রাস্তার উত্তর পাশ দিয়েই বসাচ্ছে।

রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে নতুন কসবা খোকার বাড়ি, কসবা গোরস্থান, এইচবিবি রাস্তার পাশ পর্যন্ত সড়কের ডান পাশে (উত্তর পাশের) গাছ নম্বর ০১ থেকে ৩০৬ নম্বর পর্যন্ত কড়ই, মেহগনি, আকাশমণিসহ বিভিন্ন ধরনের গাছ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।

রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী বৃক্ষপালনবিদ মীর মুকুট মো. আবু সাঈদ বলেন, পশ্চিম দিকে যেখানে একটি গাছ কাটলেই লাইন স্থাপন করা গেছে, সেখানেই তাই করা হয়েছে। কিন্তু এই এলাকায় এসে রাস্তার পাশে জমি কম পড়ে যাচ্ছে। তাই গাছ কাটতে হয়েছে।

গাছগুলো বাঁচানোর জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করার সময় জমি অধিগ্রহণের দাবি করা হয়েছিল কি না, জানতে চাইলে রাজশাহী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরিন বলেন, মন্ত্রণালয় পর্যায়ে এমওইউ স্বাক্ষর হয়। সেটিও হয়েছে তিনি রাজশাহীতে যোগদানের আগে। তাই এ ব্যাপারে আসলে তার কিছু বলার নেই।