মসজিদ-মন্দির এক উঠানেই

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
মসজিদ-মন্দির এক উঠানেই

শহরের কালীবাড়ী এলাকায় একই উঠানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে মসজিদ ও মন্দির, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। উঠানের এক পাশে ধূপকাঠির ধোঁয়া, অন্য পাশে আতরের সুগন্ধ। কোথাও ভেসে আসে উলুধ্বনি, আবার কোথাও আজানের সুর। শত বছরের বেশি সময় ধরে ধর্মীয় সহাবস্থানের এই দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছে স্থানীয় মানুষজন।

১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কালীবাড়ী কেন্দ্রীয় মন্দির। এরপর মন্দির প্রাঙ্গণে আগত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ আদায়ের জন্য ছোট একটি ঘর তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে ‘পুরানবাজার জামে মসজিদ’ নামে পরিচিতি পায়। তখন থেকেই এক উঠানে মসজিদ ও মন্দিরের কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে।

স্থানীয়রা জানান, নামাজের সময় পূজার ঢাক বাজানো বন্ধ রাখা হয়, আবার নামাজ শেষে পূজা-অর্চনা শুরু হয়। এই পারস্পরিক সমঝোতার কারণেই কোনো দিন এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বরং পূজার সময় একই মাঠে মেলা বসে, আবার একই মাঠে হয় মুসল্লিদের জানাজাও। দুই ধর্মের মানুষ সমানভাবে ব্যবহার করেন এই স্থানটি।

কালীবাড়ী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত শ্রী শংকর চক্রবর্তী বলেন, এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি অটুট ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। সারাবিশ্বে সহিংসতা হলেও এখানকার সম্প্রীতিতে কোনো দাগ পড়বে না।

এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। এমনকি কয়েক দেশের রাষ্ট্রদূতও এই প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেছেন।

লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২০০ বছর ধরে এখানে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায় পাশাপাশি তাদের ধর্ম পালন করছেন। কখনও কোনো সমস্যা হয়নি।

জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার জানান, একই উঠানে মসজিদ ও মন্দির থাকা বিরল দৃষ্টান্ত। এখানকার মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কালীবাড়ীর মসজিদ-মন্দির তার জীবন্ত প্রমাণ।

লালমনিরহাট কালীবাড়ীর এই মসজিদ-মন্দির শুধু একটি উপাসনালয় নয়, বরং পুরো দেশেই ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।