সেটেলার বাঙালিদের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আদিবাসী ছাত্র-জনতার সমাবেশ
খাগড়াছড়িতে এক জুম্ম ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের বিচারের দাবিতে চলমান শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে সেটলার বাঙালিদের পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা ও ঘরবাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুরের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন আদিবাসী ছাত্র-জনতা। আজ রবিবার বিকেলে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে আমাদের ভাইবোনদেরকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডগুলো এই সরকারের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। এই হচ্ছে এনজিওবাদী ফ্যাসিস্ট সরকারের নমুনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিতে না থাকলে, বাংলাদেশও শান্তিতে থাকবে না। আদিবাসীরা সবকিছু প্রতিহত করে সামনের দিকে আগাবে।’
এসময় তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও আমাদের সময় পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এহসান মাহমুদ।
এহসান মাহমুদ সংহতি জানিয়ে বলেন, ‘আজকে আমরা এখানে কেন এসে দাঁড়িয়েছি, সেটা আপনারা সবাই জানেন। গত তিনদিন ধরে পাহাড়ে একটি নির্দিষ্ট দাবিতে আন্দোলন চলছে। কিসের দাবিতে আন্দোলন চলছে? অবরোধ চলছে। সেই দাবি ও অবরোধের ভাষা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য আমরা দেখলাম ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র তার দায় এড়াতে পারে না, যদি ধর্ষকের বিচার না হয়। প্রতিটি ঘটনার পর আমরা দেখি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্ত কমিটির ফলাফল আমরা খুব একটা দেখি না। আবার বিচারের নামে বলা হয় দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হবে।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে যখন ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, তখন পাহাড়ের ভাই-বোনেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে বৈষম্য বিলোপের নামে আমরা স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সেই সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন, তাদের অনেককেই আমরা দেখি হাসিনার পতনের পর এখন তারা ফুল, পাখি, প্রজাপতি নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু পাহাড়ে আদিবাসী ভাই-বোনেরা কেমন আছেন, সে বিষয়ে তারা মুখ খোলেন না। রাজধানীতে তারা নাগরিক জীবনে ফিরে আসেন, কিন্তু পাহাড়ে কোনো ঘটনা ঘটলে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন না।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
মেঘমল্লার বসু বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকার আসে, সরকার যায়, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের নীতি বদলায় না। অনেকে বলছেন, পার্বত চট্টগ্রামে যারা দুই–তিন প্রজন্ম ধরে আছে তাদেরকে কেন আমরা ‘সেটলার’ বলি। সমস্যাটি হলো এই একই যুক্তি যদি আমি ইসরায়েলের প্রসঙ্গে দিই, আপনি মেনে নেবেন না। এটাই ট্রাজেডি: জাতীয়তাবাদ এমন এক অদ্ভুত বিষ, যার ভেতর দিয়ে সত্যকে সত্য দেখা যায় না। যখন আমরা জুলাই অভ্যুত্থান করেছিলাম, তখন আমরা বাঙালি ও আদিবাসী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধেও আদিবাসী ও বাঙালি কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছিল তবু আজ বলা হয়, সেই সময়ের কিছু রাজার অবস্থানের কারণে পুরো চাকমা জনগোষ্ঠীর মুক্তিযুদ্ধে দেওয়া অবদানকে টুকরো করা হচ্ছে, খাটো দেখানো হচ্ছে। হয়তো একদিন ২০২৪ এর অভ্যুত্থানের আদিবাসীদের যে কৃতিত্ব ছিল, সেটিও অস্বীকার করা হবে।’
হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা বলেন, ‘আমরা দেখেছি খাগড়াছড়িতে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করার পর আমরা সুস্থ, সুষ্ঠু ন্যায়বিচার চাইছি। আমরা কিন্তু শুধু হামলা-হানাহানি চাইনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ করে সুষ্ঠু ন্যায়বিচার চাইছিলাম। এখানে সেটলার বাঙালিরা আমাদের সুষ্ঠু অবরোধ করতে দিচ্ছে না; তারা ন্যায়বিচারের সুষ্ঠু তদন্ত দিতে চাইছে না। সরকার ও রাষ্ট্রপন্থীরা আমাদের সুষ্ঠু বিচার দিচ্ছে না এটা আমরা এখানে স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাইছি এবং এটাকে আমরা অব্যাহত রাখব। আমরা কথা দিচ্ছি ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরছি না। ধর্ষকদের ও অপরাধীদের সুষ্ঠু ন্যায়বিচার করতে হবে।’