পারমাণবিক ও অর্থনৈতিক চাপে চরম সংকটে ইরান
ইরানের ধর্মীয় শাসকরা ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে সবচেয়ে গভীর সংকটে পতিত হয়েছেন। দেশে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চাপ, মূল্যস্ফীতি এবং জনঅসন্তোষের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির চূড়ান্ত ব্যর্থতা। ফলে দ্বৈত সংকট ইরানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও বিচ্ছিন্ন এবং অভ্যন্তরীণভাবে বিভক্ত করে তুলেছে।
জাতিসংঘ শনিবার ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তেহরান ও ইউরোপীয় শক্তি-ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি এর সঙ্গে শেষ মুহূর্তের আলোচনায় কোনো সমাধান না মেলায় এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
ইরানের চারজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং দুই অভ্যন্তরীণ সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, পশ্চিমাদের সঙ্গে কোনো বড় অগ্রগতি না হলে দেশের অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং জনসাধারণের ক্ষোভ তীব্রতর হবে।
একজন কর্মকর্তা বলেন, ধর্মীয় শাসকরা এমন পরিস্থিতিতে আটকে গেছেন, যেখানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্বই হুমকির মুখে। জনগণ আর অর্থনৈতিক চাপ বা যুদ্ধ সহ্য করতে পারবে না।’
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
ইসরায়েলি হামলার সম্ভাবনার কারণে তেহরানের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। পারমাণবিক আলোচনায় ব্যর্থতা হলে ইসরায়েল আবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালাতে পারে। জুনে ১২ দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঘাত তেহরানকে হতবাক করেছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় শুরু হলে তারা তেহরানের ওপর অবিলম্বে হামলা চালাতে দ্বিধা করবে না।
এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের জন্য মারাত্মক চাপ তৈরি করেছে। দেশটি এখনো চীনের ওপর নির্ভর করছে, কারণ চীন ইরানের প্রধান তেলের ক্রেতা। তবে নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় রপ্তানিও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
ইরানের সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সংকট, মুদ্রাস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ। সরকারি হিসাব অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি প্রায় ৪০%, কিন্তু কিছু সূত্রের মতে এটি ৫০% ছাড়িয়েছে। খাদ্য, বাসাভাড়া ও ইউটিলিটি খরচ ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে।
তেহরানের স্কুলশিক্ষিকা শিমা (৩৬), দুই সন্তানের মা, রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা আগেই টিকে থাকার লড়াই করছি। নতুন নিষেধাজ্ঞা মানে আরও চাপ। আমরা কীভাবে বাঁচব?’
ফলে জনরোষ বড় বিক্ষোভে রূপ নিতে পারে, যা দেশকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও দুর্বল অবস্থায় ফেলে দেবে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
তাছাড়া শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে কৌশল নিয়ে বিভাজন ক্রমশ বেড়েছে। কেউ কঠোর অবস্থানের পক্ষে, আবার কেউ মনে করছে অতিরিক্ত কঠোরতা ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে।
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পরিস্থিতিতে তেহরানের সামনে বিকল্প খুব সীমিত-না যুদ্ধ, না চুক্তি, বরং আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং সময় নেওয়া।