পল্লবীতে খুনের পর ‘স্যার ফিনিশ’ /

সিআইডির চার্জশিটেও নারাজি বাদী

ইউসুফ সোহেল
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সিআইডির চার্জশিটেও নারাজি বাদী

চার বছর আগে জমিসংক্রান্ত বিরোধে রাজধানীর পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনে সাহিনুদ্দিন সাহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ৭ বছরের সন্তানের সামনে এই খুনের পর লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এমএ আউয়ালকে ফোন করেছিলেন খুনে অভিযুক্ত সুমন ব্যাপারী। সংক্ষিপ্ত সেই আলাপে জানানো হয়, ‘স্যার ফিনিশ’। সারাদেশে আলোড়ন তোলা এই হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া মামলায় তৃতীয় তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে এর বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেছেন মামলার বাদী। তবে এই নারাজিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন নিহত সাহিনের স্ত্রী মাহমুদা বেগম। তাকে এই মামলায় সম্পূরক বাদী হিসেবে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

সাহিনুদ্দিন সাহিনকে খুনের ঘটনায় ২০২১ সালের ১৭ মে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫ জনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মামলা করেন তার মা আকলিমা বেগম। প্রথম দফায় তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ সাবেক এমপি আউয়ালসহ ১৫ জন এবং দ্বিতীয় দফায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ১৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। কিন্তু এই দুই তদন্ত সংস্থার দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধেই আদালতে নারাজি আবেদন করেন বাদী আকলিমা বেগম। আদালতের নির্দেশে তৃতীয় দফা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। অধিকতর তদন্ত শেষে গত ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে সিআইডি। এতে ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি এমএ আউয়াল ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সুমন ব্যাপারীসহ ১৬ আসামিকে অভিযুক্ত করা হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিআইডির চার্জশিটের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দিয়েছেন আকলিমা বেগম।

তবে তিনটি সংস্থার চার্জশিটের বিরুদ্ধে বারবার নারাজির আবেদনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কালক্ষেপণ হিসেবে দেখছেন নিহত সাহিনুদ্দিনের স্ত্রী মোসা. মাহমুদা বেগম। এই মামলায় সম্পূরক বাদী হিসেবে যুক্ত হতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতে আবেদন করেন তিনি। মাহমুদার আইনজীবী অ্যাডভোকেট বাবলুর রহমান মঞ্জু জানান, তার আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন।

ন্যায়বিচারের স্বার্থে নারাজির আবেদন যৌক্তিক বলে মনে করেন মামলার বাদী আকলিমা বেগম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, সিআইডি আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার আগে আমাকে কিছুই জানায়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তা আমার সঙ্গে আলাপই করেননি। ডিবি এবং পিবিআইর মতো করে তিনিও অভিযোগপত্র দিয়েছেন। আকলিমা বলেন, ঘটনার চার বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনও ন্যায়বিচার পাইনি, উল্টো জামিনে বেরিয়ে আসামিরা হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

বাদীর অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে মামলার সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক (ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম) মো. শফিউল আজম খান বলেন, যথাযথ তদন্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। নারাজির বিষয়টি অবগত নন বলেও জানান তিনি।

সিআইডির অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, পল্লবী থানা এলাকায় আলিনগর আবাসিক প্রকল্পে নিহত সাহিনুদ্দিনসহ ১৩ জন জড়িত ছিল। সাবেক এমপি আউয়ালের মালিকানাধীন হ্যাভেলি প্রোপার্টি লিমিটেডের পক্ষে আসামি সুমন ব্যাপারী ও নিহত সাহিনুদ্দিন প্রকল্পের সব উন্নয়নমূলক কাজ করতেন। তবে কাজ করা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বাড়তে থাকে। এর জের ধরে ২০২১ সালের ১৬ মে বিকাল ৪টায় সাহিনুদ্দিনকে ইটের টাকা নিতে আসতে ফোন করেন আসামি সুমন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে টাকা নিতে আসেন তিনি। এ সময় সুমন সাহিনুদ্দিনের কাঁধে হাত রেখে অন্যদের ইশারা করেন। এর পর কিলাররা সাহিনুদ্দিনকে তার ছেলের সামনে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, রামদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে।

চার্জশিটে উল্লিখিত অন্য আসামিরা হলেন- মোহাম্মদ তাহের, মুরাদ, টিটু শেখ, গোলাম কিবরিয়া খান, বাওনা সুমন ওরফে ইব্রাহিম সুমন ওরফে তোফাজ্জল হোসেন, রকি তালুকদার, শরিফ, তুহিন মিয়া, তরিকুল ইসলাম ইমন, হারুনুর রশিদ, নুর মোহাম্মদ হাসান, ইকবাল হোসেন নুর, শফিকুল ইসলাম শফিক ও প্রতিক আহম্মেদ সজিব। এ ছাড়া বাদীর অভিযোগের বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় মো. দিপু, কালু ওরফে কালা বাবু, জহিরুল ইসলাম, মঞ্জুরুল হাসান বাবু ওরফে ব্লেড বাবু ওরফে ইয়াবা বাবু, মো. শফিক, আব্দুর রাজ্জাক, কামরুল, মরন আলী, মো. লিটন ও আবুল এবং ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আসামি মানিক ও মনির নিহত হওয়ায় তাদের এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয় সিআইডির চার্জশিটে।