‘জেতার জন্য নোংরামি করবেন না’
৬ অক্টোবর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচন। এবারের নির্বাচন ঘিরে তৈরি হচ্ছে ব্যাপক উত্তেজনা। নির্বাচনে সভাপতি পদে লড়ার জন্য ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ততই যেন নোংরামি বাড়ছে, এমনটাই মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান। ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাব থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়া তামিম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। কিন্তু তার কাউন্সিলরশিপ নিয়ে আপত্তি উঠেছে।
নিজের কাউন্সিলরশিপের আপত্তির শুনানিতে গতকাল তাকে হাজির হতে হয়েছিল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এর আগে কেবল একটি পরিচয়ে তামিম গিয়েছেন মিরপুরে। চেনা আঙিনায় তামিমের আজকের পরিচয় কেবল ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে। নির্বাচনের আগে যা হচ্ছে তা অনুকল্পনা করেননি তিনি। তাই তো তার ভাষায় নোংরামি বাদ দিয়ে ক্রিকেটের বৃহৎ স্বার্থ দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তামিমের কাউন্সিলরশিপ অবৈধ দাবি করে বলা হয়েছে, তিনি এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেননি। অথচ চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ান বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক। চিঠিতে তামিম ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কেউ নন বলেও উল্লেখ করা হয়।
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তামিম বলেছেন, ‘আমার নামে যিনি কমপ্লেইন করছেন, সেই তিনি বিভিন্ন জায়গায় বলে যাচ্ছেন, তিনি অভিযোগ করেননি। চিঠিতে উল্লেখ করা আছে যে, ওল্ড ডিওএইচএসের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। ওল্ড ডিওএইচএসের কমিটিটা খুঁজে বের করে দেখেন আমি আছি কি নেই। আমার এটা লজ্জা লাগছে যে আজকে আমার এই জায়গায় এসে এই জিনিসগুলো এক্সপ্লেইন করতে হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিপক্ষে অভিযোগ আনার আগে ওনারা একটা বিষয় ভুলে যাচ্ছেন, গঠনতন্ত্রে কিন্তু দুটি কথা উল্লেখ করা আছে- ‘অর্গানাইজার বা সাবেক ক্রিকেটার।’ আমি যে অর্গানাইজার না, এটা কেউ প্রমাণ করতে পারবেন? তিনটা টিম ওন করি, দুইটা টিমের কমিটিতে আছি। দ্বিতীয় কথা হলো, ‘সাবেক ক্রিকেটার।’ আপনারা গঠনতন্ত্রটা বের করে দেখেন, সাবেক ক্রিকেটারের কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া আছে কিনা যে, আমার অফিসিয়ালি রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করতে হবে?’
আরও পড়ুন:
স্পিনে ভরসা রাচিনের
তামিম আরও যোগ করেন. ‘যদি এই কেসই হয়, মোহাম্মদ আশরাফুল তো রিসেন্টলি ইংল্যান্ডে ক্রিকেট খেলে এসেছেন। আমিনুল ইসলাম বুলবুল ভাই, আমাদের প্রেসিডেন্ট, উনিও অফিসিয়ালি কোনো জায়গায় রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করেননি। যদি আপনারা আমাকে ঐভাবে ফাঁসাতে চান, তাহলে উনারাও ফেঁসে যাবেন। আমি লাস্ট পাঁচ মাস আগে খেলেছি। আমি যদি নিজের মনের মধ্যেই চিন্তা করে রাখি যে, আমি আর ক্রিকেট খেলব না, তা আমি তো সাবেক হয়েই গেলাম। গঠনতন্ত্রে যদি এ কথাটা লেখা থাকে যে একদম স্পেসিফিকলি আপনাকে অমুক ডেটে ঘোষণা দিতে হবে, তাহলেই আপনার এই কাউন্সিলরশিপ বৈধ, তাহলে আমি মানতে পারি।’
বুধবার জমা হওয়া ৩০টি আপত্তির মধ্যে বেশির ভাগই ছিল ক্লাব নিয়ে। দুদকের পর্যবেক্ষণে গত কয়েক বছরে তৃতীয় বিভাগ বাছাই থেকে ওঠা ১৮টি ক্লাবের বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে নেমে যাওয়া ৩টি ক্লাব ছাড়া বাকি ১৫টি ক্লাবকে এবার কাউন্সিলরশিপ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই ১৫টি ক্লাবের পক্ষে কথা বলেছেন তামিম। আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে ক্রিকেটের বৃহৎ স্বার্থ দেখার আহ্বান জানিয়ে তামিম বলেন, ‘এখানে ১৫টা ক্লাবের চেয়ে বড় বিষয় হলো আপনারা যে সিদ্ধান্তটা নিতে যাচ্ছেন, আপনার ৩০০টা ক্রিকেটারের কথা মাথায় রাখতে হবে। এই ১৫টা ক্লাব রেগুলারলি ক্রিকেট খেলে, বিভিন্ন ডিভিশনে ক্রিকেট খেলে এবং প্রত্যেকটা প্লেয়ারকে পেমেন্ট করে। ওই টাকা দিয়েই কিন্তু তাদের একটা বছরের ৭০-৮০% আয় হয়। আর তাদের প্লেয়ারদের সঙ্গে তাদের পরিবারও জড়িত। তো আপনারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এই জিনিসটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’
আরও পড়ুন:
সূর্যর সাফল্যের মন্ত্র
তামিমের প্রশ্ন, ‘কী কারণে এটা করা হচ্ছে এটা ক্লিয়ার। আমি উনাদেরকে বলেছি, এই ১৫টা ক্লাব নিয়ে যে ইস্যু ছিল, ইস্যুটা তো লাস্ট ছয়-সাত মাস ধরে অনগোয়িং ইস্যু। এখনই আপনাদের এই কাজটা কেন করতে হলো? দ্বিতীয়ত আপনাদের যদি কোনো অবজেকশন থাকত, তাহলে আপনারা কাউন্সিলর ফর্মটা দিলেন কেন? এই ১৫টা কাউন্সিলরের মধ্যে আমি ধরে নিলাম তিনজন-চারজন যোগ্য কাউন্সিলর হতে পারে, যারা আসলে ক্রিকেটকে খুব ভালো একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। তাদের স্বপ্নও তো আপনি নষ্ট করে দিলেন। আজকে যদি এটা বিপক্ষে যায়, তাদের আর কোনো চান্সই নাই নতুন করে কাউন্সিলর হওয়ার। যদি আপনারা তাদেরকে বলতেন যে এই ক্লাব থেকে কাউন্সিলর হলে এ রকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে, তাহলে তো ওই ১৫টা কাউন্সিলরের একটা অপশন থাকত যে ওরা অন্য কোনো একটাভাবে এসে কাউন্সিলর হতে পারত।’
তার দাবী, ‘এই ক্রিকেট ক্লাবগুলোর একটা হিস্ট্রি আছে, পেমেন্ট রেকর্ড আছে। জিনিসগুলো কেন করা হচ্ছে, এটা ইলেকশনকে একটা সাইডকে উইক করার জন্য করা হচ্ছে, এটা সবাই জানে। এত খারাপ সময় এসে গেল যে জেতার জন্য বা নিজের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য আপনারা ৩০০টা ক্রিকেটারের লাইফের সঙ্গে খেলা শুরু করলেন।
আরও পড়ুন:
বিপাকে আলভেস