নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই: নূর আলী
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. নূর আলী। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাভারের আশুলিয়ায় ইউনিক গ্রুপের উদ্যোগে জাপানি ভাষা শিক্ষা পরীক্ষায় বিভিন্ন কোর্সে উত্তীর্ণ ছাত্রদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
নূর আলী বলেন,‘পর্যাপ্ত মেধা ও দক্ষতা স্বত্বেও কেবলমাত্র ভাষা না জানার কারণে প্রবাসে বিশেষ করে জাপানে জনশক্তি রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। অথচ দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে অনেক আগেই কয়েকগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দেশে পরিণত হতে পারতো বাংলাদেশ।’
তিনি আরও বলেন,‘বাংলাদেশি দক্ষ শ্রমিকদের জন্যে আকর্ষণীয় গন্তব্য জাপান। উন্নত দেশটিতে অর্থনৈতিক সুযোগ এবং উন্নত জীবনযাত্রার উচ্চমান বরাবরের মতো আকর্ষণ করে দক্ষ অভিবাসী শ্রমিকদের। ভাষা ও কারিগরি দক্ষতার দিক দিয়ে আমাদের দক্ষ অভিবাসী শ্রমিক পাঠানোয় এগিয়ে ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া এবং নেপাল।’
ইউনিক গ্রুপের এমডি বলেন, ‘অন্যান্য দেশ যেখানে ১২ থেকে ১৬টি খাতে অভিবাসী শ্রমিক প্রেরণ করে সেই তুলনায় বাংলাদেশ মাত্র তিনটি পরিচর্যা (কেয়ার কিভার),নির্মাণ ও কৃষিখাতে জনশক্তি প্রেরণ করে। আর সেখানেও অপরিহার্য জাপানি ভাষা শিক্ষা। দেশের স্বার্থে আমরা সেই কাজটিই করছি। আমাদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। জাপানে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাময় বাজার ধরতে আমাদের বেশি বেশি স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। যেখানে আমরা ভাষা ও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ শ্রমিক তৈরি করে তাদের বিদেশে পাঠাতে পারব। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের মতো দেশ থেকে একজন অভিবাসী শ্রমিক যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করবে সে তুলনায় জাপান থেকে একজন দক্ষ শ্রমিক রেমিট্যান্স পাঠাবে দশগুণের বেশি।’
জাপানের উন্নত প্রযুক্তি, শিক্ষা,বিনয় এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র দক্ষ ও মেধাবী হলেই চলবে না পাশাপাশি নিজেকে শৃঙ্খলা,আচার-আচরণ,নিয়মানুবর্তিতা আর সততার মাধ্যমে এক একজন শ্রমিককে পরিণত করতে হবে বাংলাদেশি দূত হিসেবে। তবেই তাদের কাছে আমাদের কদর বাড়বে। এভাবেই ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হবে শ্রম বাজার।’
ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ও বোরাক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দক্ষ প্রশিক্ষকদের প্রশংসা করে নূর আলী বলেন, ‘দক্ষ বাংলাদেশি শিক্ষক এবং জাপানিজ শিক্ষকদের মাধ্যমে ডিজিটাল পাঠদানের মাধ্যমে সেন্টারটি ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে দক্ষ শ্রমিক বিনির্মাণে ভবিষ্যতে জাপান থেকে সরাসরি প্রশিক্ষক যোগ দেবেন।’
সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন,‘সরকারের নীতি সহযোগিতা হলে দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবে ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার ও বোরাক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।’
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশকেই নয় বরং নিজের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণেও যে জাপান একটি সম্ভাবনার দেশ, সেটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইউনিক গ্রুপের এমডি বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রম,মানবিক উৎকর্ষতা,সময়ানুবর্তিতা, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধারণ সেখানেই জীবন গড়া এমনকি স্থায়ী হওয়া খুবই সহজ। মনে রাখতে হবে মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের তুলনায় ব্যয়বহুল অভিবাসন ব্যয়ের তুলনায় কম খরচে জাপানে অভিবাসন এবং সেই তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের কারণে দক্ষ শ্রমিকদের জন্যে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে জাপান।’
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ ছানোয়ারুল হক বলেন,‘এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে বাংলাদেশ থেকে মূলত নির্মাণখাতে কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার বা নির্মাণশ্রমিক, কৃষি খাতে কৃষিকর্মী, সেবা খাতে নার্স ও কেয়ারগিভার, ট্যুরিজম খাতের হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট কর্মী, আইসিটি খাতে আইটি কর্মী ও অন্যান্য খাতে সাধারণ শ্রমিকদের কাজের সুযোগ দিচ্ছে। এ সব খাতে তিনটি উপায়ে কাজের ভিসা যাওয়া যায়। প্রথমত স্পেসিফাইড স্কিলস ওয়ার্কার (এসএসডাব্লিউ), দ্বিতীয়ত টেকনিক্যাল ইন্টার্ন এবং তৃতীয়ত ডিরেক্ট এমপ্লয়মেন্ট বা জাপানি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্পেসিফাইড স্কিলস ওয়ার্কার (এসএসডাব্লিউ) হিসেবে কাজে গেলে প্রতিষ্ঠান ভেদে মাসিক বেতন ধরা হবে বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা। টেকনিক্যাল ইন্টার্নদের বেতন এক লাখ ৩০ হাজার থেকে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। ডিরেক্ট এমপ্লয়মেন্ট বা সরাসরি নিয়োগ ক্ষেত্রে বেতন ও ওভারটাইম ধরা হবে সংশ্লিষ্ট পদ অনুযায়ী জাপানের শ্রম আইন অনুসারে। জাপানে যাওয়ার বিমান ভাড়া নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে। সেখানে বাসস্থান, চিকিৎসা ও খাওয়াসহ অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকেই পাওয়া যায়। কাজের কর্মঘণ্টা, সাপ্তাহিক ছুটিসহ অন্য বিষয়াদি জাপান সরকারের শ্রম আইন অনুসারে নির্ধারণ করা হয়। তাই নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এখনই সময় জাপানের মতো উন্নত দেশগুলোতে হাতছানি দেওয়া সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো।’
আশুলিয়ার ঘোষবাগে ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার লিমিটেডের আয়োজিত জাপানিজ ভাষা JLPT-N4 পরীক্ষায় বাংলাদেশে রেকর্ড অর্জনকারী (১০০% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ) এবং JLPT-N4/JFT-A2 পরীক্ষায় পাশ করা শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনায় তাদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. নূর আলী।
ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার লিমিটেডের ডিজিএম (ট্রেনিং এন্ড অপারেশন) জাহেদুল হক তুষারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ ছানোয়ারুল হক। উপস্থিত ছিলেন ইউনিক গ্রুপের জিএম (আইটি) কৌশিক আহম্মেদ ও বোরাক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনসহ আরও অনেকে।