অবশেষে জেল হলো সেই আশ্রয়প্রার্থীর
গ্রীষ্মের এক রোদে ঝলমলে বিকেল। এপিং শহরের কেন্দ্রে দু’জন কিশোরী বসে পিজার স্লাইস ভাগাভাগি করে খাচ্ছিল। হাসি, গল্প আর ঠাট্টায় মশগুল তারা। হঠাৎ করে পাশে এসে দাঁড়ান এক অচেনা লোক। তার নাম হাদুশ কেবাতু। বয়স চল্লিশের ঘরে। ইথিওপিয়া থেকে ছোট নৌকায় ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে এসেছেন নতুন জীবনের খোঁজে। এখন আশ্রয় পেয়েছেন এপিংয়ের দ্য বেল হোটেলে। কিন্তু সেই বিকেলেই তিনি মুখ খুললেন, আর তার মুখ থেকে বের হওয়া শব্দগুলো ছুরির মতো বিঁধে গেল দুই কিশোরীর কানে।
তার বক্তব্য, ‘আফ্রিকায় এসো। তোমরা ভালো স্ত্রী হবে। আমি তোমার কাছ থেকে একটি সন্তান চাই, আর তোমার বান্ধবীর কাছ থেকে আরেকটি।’
পরের দিন দৃশ্যপট আরও অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। স্কুল ইউনিফর্ম পরা এক কিশোরী বেঞ্চে বসেছিল। কেবাতু এগিয়ে এসে হাসি দিয়ে বললেন, ‘তুমি সুন্দরী।’ তারপর হাত বাড়িয়ে মেয়েটির উরুতে রাখলেন, আর চুমু দিতে ঝুঁকলেন। কিশোরী ভয়ে জমে গেলেও সাহস করে জানাল- ‘না, আমি মাত্র ১৪।’
জবাবে কেবাতুর ঠাণ্ডা উত্তর- ‘বয়স কোনো ব্যাপার নয়।’
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
শহরের নীরবতা হঠাৎই ভেঙে যায়। ভুক্তভোগীরা সাহস করে পুলিশকে জানান, আর শুরু হয় এক ঝড়। হোটেলের সামনে জমতে থাকে মানুষ, শুরু হয় বিক্ষোভ। এক আশ্রয়প্রার্থীর অপরাধ গোটা এপিংকে পরিণত করে আলোচনার কেন্দ্রে।
তিনিই সেই খলনায়ক, যার কর্মকান্ডের দরুণ যুক্তরাজ্যে একের পর এক ঘটে যাচ্ছিল বিভিন্ন ঘটনা। প্রথমে বেল হোটেলে স্থানীয়দের হামলা, অবরোধ এবং সর্বশেষ টমি রবিনসনের সেন্ট্রাল লন্ডনে অভিবাসী বিরোধী সামাবেশ- এ সবের মূল কারণ এই খলনায়ক। অবশেষে এক নারী ও একজন কিশোরীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাকে ১২ মাসের জেল প্রদান করা হয়েছে। কারাভোগের পর তাকে যুক্তরাজ্য হতে বহিষ্কার করা হবে বলে রিপোর্টে প্রকাশ।
আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কেবাতু নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করেন। বলেন, ‘আমি বন্য প্রাণী নই। খ্রিস্টান হিসেবে এসব কাজ আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ কিন্তু প্রমাণ ভিন্ন কথা বলছিল।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
বিচারক ক্রিস্টোফার উইলিয়ামস স্পষ্ট ভাষায় জানান- ‘এটি ছিল জঘন্য ও ঘৃণ্য আচরণ।’
তিনি দেখলেন, কেবাতু শুধু একবার নয়, একাধিকবার শিশুদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। এমনকি সাহায্য করতে আসা নারীকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন।
রায়ে বলা হয়- এক বছরের কারাদণ্ড। এরপর স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে তাকে। কিন্তু সাজা ঘোষণার পরও থেকে গেছে কিছু অমোচনীয় দাগ। কিশোরীর কথাগুলো যেন এপিং শহরের দেয়ালে লিখে গেল ভয়ের ভাষ্য- ‘প্রতিবার আমি বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে গেলে পেছনে তাকাই। মনে হয় কেউ আমাকে অনুসরণ করছে।’
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
এপিংয়ের রাস্তায় আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। দোকানগুলো খোলা থাকবে, ক্যাফেতে হাসি-আড্ডা চলব। কিন্তু দ্য বেল হোটেলের সামনে দাঁড়ালে এখনো যেন ভেসে আসে সেই গ্রীষ্মের উত্তেজনা, প্রতিবাদের স্লোগান আর এক অচেনা মানুষের অন্ধকার ছায়া।
এপিং শহর তাকে চেনে-আশ্রয়প্রার্থী নয়, বরং একজন অপরাধী হিসেবে। যে ভয় আর বিতর্কের একটি অধ্যায় লিখে গেছে শহরের ইতিহাসে।