মাদারীপুরে ৬১ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান
মাদারীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান। কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তার, কোথাও আবার মাথার ওপর থেকে ঝরে পড়ছে ইট আর শুরকি। অনেক ভবনে ফাটল ধরে বেরিয়ে পড়েছে রড। এমন পরিস্থিতিতে চরম ঝুঁকি নিয়েই পড়াশোনা করছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নতুন ভবনের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি কোনো সমাধান।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডে ১৯৪০ সালে ৬ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত রিজিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের করুণ অবস্থা। বিদ্যালয়ে মাত্র তিনটি কক্ষে কোনো রকম ঠাসাঠাসিভাবে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার বলেন, ‘আমাদের এখানে বাচ্চারা ভর্তি হয় ঠিকই, কিন্তু বিদ্যালয়ের ঝুকিপুর্ণ দেয়াল বা কক্ষ দেখে অনেকে অন্যত্র চলে যায়। আমাদের নেই কোনো খেলার মাঠও। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষসহ আরও কক্ষ প্রয়োজন।’
এই বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী তামিম মাতুব্বর বলে, ‘ক্লাসে থাকাকালীন মাথার ওপর প্রায়ই বালু বা শুরকি পড়ে। সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়। নতুন ভবন ছাড়া আমরা ঠিকমতো পড়তে পারছি না।’
জানতে চাইলে ৬২ বছরের রহিমা বেগম বলেন, ‘আমি আমার নাতিকে এই বিদ্যালয়ে পড়াই। সবসময় আতঙ্কে থাকি কখন কোন অঘটন ঘটে। আমি জরুরি ভিত্তিতে এই ভবনের সংস্কার ও নতুন সম্প্রসারণ দাবি করছি।’
কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭৩ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ১৯৯৩ সালে নির্মিত টিনশেড ঘরটি এখন জরাজীর্ণ। সেই টিনশেড ঘরের চাল চুইয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি, শ্রেণিকক্ষ ডুবে যায়। ফলে পাঠদান বন্ধ হয়ে অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি ফিরে যায়। পাশে ২০০৯ সালে নির্মিত দোতলা ভবনটিও এখন নাজুক অবস্থায়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরে নতুন ভবনের দাবি জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি।
একই চিত্র সদর উপজেলার কোলচরি নিজগ্রামের ক, খ, গ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। শ্রেণিকক্ষে পাঠ চলাকালে প্রায়ই মাথার ওপর থেকে ঝরে পড়ে পলেস্তার, ইট বা শুরকি।
দক্ষিণ কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ঝড়ো বাতাসে বাড়ছে আতঙ্ক। এতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষার পরিবেশ ভেঙে পড়বে।’
ক, খ, গ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খানম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কারণে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। প্রতিদিনই মাথার ওপর পলেস্তারা খসে পড়ছে। শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিতে।’
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফজলে ইলাহী বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৭১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ জন শিক্ষার্থী পড়ছে। এর বিপরীতে আছেন ৪ হাজার ৫৮ জন শিক্ষক। এর মধ্যে ৬১টি বিদ্যালয় কয়েক বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ বা পরিত্যক্ত ঘোষিত।