ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় কী পরিবর্তন আসবে
যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া আর কানাডা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্স সহ আরো কয়েকটি দেশ সামনের কয়েকদিনের মধ্যে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এই স্বীকৃতির আসলে অর্থ কী? এর ফলে কী পরিবর্তন হতে পারে?
কাগজে কলমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলে কিছু নেই। তবে রাষ্ট্র হিসেবে বহু দেশ এই ভূখণ্ডকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে, বিভিন্ন দেশে এই দেশের কূটনৈতিক মিশনও রয়েছে।
কিন্তু ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনের দীর্ঘসময়ের বিরোধের কারণে ফিলিস্তিনের কোনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা, রাজধানী বা সেনাবাহিনী নেই।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর বহু বছরের দখলদারিত্ব চলার পর ১৯৯০'এর দশকে 'প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটি' বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয়, যাদের ঐ ভূখণ্ড ও সেখানে বসবাসরত মানুষের ওপর পূর্ণ নিয়ণ্ত্রণ নেই। ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজা এখন যুদ্ধক্ষেত্র।
কাজেই এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়া অনেকটাই প্রতীকী। নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করলে এটি বেশ শক্ত পদক্ষেপ, কিন্তু বাস্তবতা হলো – এই সিদ্ধান্তে ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি খুব একটা পরিবর্তন হবে না।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!
তবে এই প্রতীকী পদক্ষেপও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি জুলাইয়ে জাতিসংঘে এক ভাষণে বলেছিলেন: "দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সমর্থনে ব্রিটেন একটি বিশেষ দায়বদ্ধতা অনুভব করে।"
সেসময় তিনি ১৯১৭ সালের ব্যালফোর সনদের উল্লেখ করেন। তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার ব্যালফোরের তত্বাবধানে ঐ সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় 'ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় আবাস প্রতিষ্ঠার' বিষয়টি সমর্থন করেছিল যুক্তরাজ্য।
ঐ সনদে উল্লেখ করা ছিল যে 'ফিলিস্তিনে থাকা ইহুদি নয় এমন মানুষের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার ক্ষুন্ন করে' এমন কোনো কার্যক্রম সেখানে পরিচালনা করা যাবে না।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস
একসময় ফিলিস্তিন হিসেবে পরিচিত ঐ ভূখণ্ড ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত লিগ অব নেশনসের এক ম্যান্ডেটের আওতায় বৃটিশরা শাসন করে।
এরপর ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরি হয়। ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াসও চলতে থাকে।ডেভিড ল্যামি'র মত বহু রাজনীতিবিদ 'দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান' পঙক্তিটি বারবার ব্যবহার করে গেছেন। এই পঙক্তিটি দ্বারা বোঝানো হয় পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হবে।
১৯৬৭ সালের ইসরায়েল-আরব যুদ্ধের আগে ঐ অঞ্চল যেভাবে বিভক্ত ছিল, সেই বিভক্তির ভিত্তিতেই দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে বলে বলা হয়ে আসছিল। ১৯৬৭ সালে যুদ্ধের পর ইসরায়েলের দখলে চলে যাওয়া পূর্ব জেরুজালেমের হওয়ার কথা ছিল ফিলিস্তিনের রাজধানী।
তবে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ক্ষেত্রে বহু বছর ধরে আন্তর্জাতিক প্রয়াস চলমান থাকলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি। আর এর মধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ দখল যত বেড়েছে, দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান কথাটি দিনদিন ফাঁপা বুলি হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
আরও পড়ুন:
২৫ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস