ভূমি কর্মকর্তার বেকার স্বামীর অঢেল সম্পদ

তাবারুল হক
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
ভূমি কর্মকর্তার বেকার স্বামীর অঢেল সম্পদ

ভূমি মন্ত্রণালয়ের বাজেট ও অডিট শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা ও তাঁর ‘বেকার’ স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ভূঁঞার নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা হওয়া অভিযোগে বলা হয় ঘুষ, দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে গত ১৮ বছরে তাঁরা আটতলা ভবন, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বাণিজ্যিক স্পেস ও প্লটের মালিক হয়েছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, এসব সম্পদের একটি বড় অংশ বিক্রি করে বিদেশে অর্থ পাচারও করেছেন তাঁরা। পারভীন সুলতানা তাঁর ‘বেকার’ স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ভূঁঞার নামে সুকৌশ এসব সম্পদ গড়েছেন। এ বিষয়ে গত আগস্টের মাঝামাঝি দুদকে একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়েছে। এ ছাড়া পারভীন সুলতানার নিজের নামেও একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে।

ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে স্বামীর নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পারভীন সুলতানা আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমার নিজের নামে যে সম্পত্তি রয়েছে, তা আমার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করা আছে। আমি আয়কর রিটার্ন দাখিল করি। সেখানে দেখতে পাবেন। পৈতৃক সূত্রে আমার সাড়ে তিনটি ফ্ল্যাট পেয়েছি। সেগুলো ছাড়া আমার অন্য কোনো সম্পদ নেই।’

স্বামীর সম্পত্তির উৎসের বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি এক সময় ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। ব্যবসার আয় থেকে তাঁর নামে ওইসব সম্পদ করেছেন।’ তবে স্বামী কী ব্যবসা করতেন এ বিষয়ে কিছু জানাতে চাননি। এখন স্বামী যে বেকার, সেই কথা স্বীকার করেছেন পারভীন সুলতানা।

দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়- গত ১৮ বছর ধরে ঘুষ-দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণার মাধ্যমে পারভীন সুলতানা ও তাঁর স্বামী সাখাওয়াত হোসেন বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভবের মালিকানা অর্জন করেন। একজন সামান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা হয়ে কীভাবে এত সম্পদ অর্জন করেছেন, লিখিত অভিযোগে তার তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।

পারভীনের স্বামী সাখাওয়াত হোসেন ভূঁঞার নামে নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভূমি পল্লী আবাসন প্রকল্পের ৭ নম্বর রোডের এ-৯৮ নম্বর প্লটের ৩৫৯ অযুতাংশ জমির ওপর আটতলা একটি ভবন রয়েছে। এ ভবনের তিনতলা ফ্লোরটি নির্মাণের সময় অপর এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়। তিনতলা ফ্লোরের সম্পূর্ণ ১ হাজার ৩৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি ২০২১ সালে রায়হান ইকবাল নামে এক প্রবাসীর কাছে বিক্রি করেন। ফ্ল্যাটটি নারায়ণগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রায়হান ইকবালের নামে রেজিস্ট্রিও করা হয়।

তিনতলার ফ্ল্যাট বিক্রির দলিলটি গোপন রেখে প্রতারণার মাধ্যমে সম্পূর্ণ আটতলা ভবনটি সাখাওয়াত হোসেন নিজের নামে নামজারি করেন। পরে প্রতারণার মাধ্যমে ফারহানা ইয়াসমিন নামে এক বক্তি ও তাঁর আত্মীয়দের কাছে ফ্ল্যাটটি ৪ কোটি টাকায় বিক্রি করেন। এই কেনাবেচার দলিলে পারভীন সুলতানা সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন।

রাজধানীর মিরপুর সাড়ে ১১, উত্তর সেনপাড়ায় পল্লবী মেট্রো স্টেশনের পাশে পারভীনের স্বামীর নামে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে। পর্বতা মৌজার জুবলি লাইন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পাশে বাড়ি নং ১/১১/এ ২ নম্বর ফ্লোরের ফ্ল্যাট-২/বি ১৫৪০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটি গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর বিক্রি করার জন্য একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়।

ঢাকার মালিবাগ ৯৫, ডিআইটি রোড সোহাগ এসি বাস কাউন্টারের বিপরীত দিকে রাশেদা ম্যানশনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৪০০ বর্গফুটের একটি কমার্শিয়াল স্পেস অফিস হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন পারভীন সুলতানা এবং তাঁর স্বামী। এটিও সাখাওয়াত হোসেনের নামে কেনা হয়েছে।

অন্যদিকে, ঢাকার পূর্বাচলে নর্থ সাউথ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান নর্থ সাউথ কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের নর্থ সাউথ গ্রিন সিটি থেকে ৬ কাঠার একটি প্লট কিনেছেন পারভীন সুলতানা। এ প্লটটির নাম্বার-১৪৯৪/৪৮৫ ব্লক-ভিআইপি। এটিও তাঁর স্বামীর নামে কেনা হয়।

এ ছাড়া পারভীন সুলতানার স্বামী ও অন্য স্বজনের নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর, ডিপিএস এবং বিভিন্ন জায়গায় ফ্ল্যাট ও জমি ক্রয় করেছেন। গত ১৮ বছর দুর্নীতি ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করে এবং পরবর্তী সময়ে তার বেশিরভাগ বিক্রি করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সাখাওয়াত ও পারভীন দম্পতি সম্পর্কে জানেন- এমন এক ব্যক্তি আমাদের সময়কে বলেন, পারভীন এবং তাঁর স্বামী মিলেমিশে তাঁদের সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছেন। হয়তো সম্পদ বিক্রির টাকা তাঁরা পাচার করে থাকতে পারেন।

দুদকে আসা পারভীন সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, অভিযোগটি দুদকের এখতিয়ারভুক্ত। এটি দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি (যাবাক) পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।