বিএনপি কর্মীর শরীরে ৪২ কোপ, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন এ্যানি

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:১৭
শেয়ার :
বিএনপি কর্মীর শরীরে ৪২ কোপ, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন এ্যানি

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির মিছিলে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুরের যুবদল নেতা আব্দুল মান্নান ছুট্টু আওয়ামী লীগের বর্বর হামলার শিকার হন। হামলায় আব্দুল মান্নানের শরীরে ৪২ কোপ দেয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা। এ ঘটনার ৯ বছর পর আজ রবিবার ওই যুবদল নেতার চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। আজ দুপুরে এ্যানি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের মুসলিমাবাদ গ্রামে ছুট্টুর বাড়িতে যান। এ সময় তিনি ছুট্টুর চিকিৎসার দায়িত্ব, ঘর নির্মাণসহ তার ছেলের পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সানারপাড় এলাকায় আন্দোলনের সময় বিএনপির মিছিলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের বর্বর হামলার শিকার হন আব্দুল মান্নান ছুট্টু। সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজনের ছুট্টুর শরীরে ৪২ কোপ দেন। তার বাম হাতের একটি আঙ্গুল কেটে দেয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল ডান পায়ের রগ। সম্প্রতি স্থানীয় একটি অনলাইনে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে থাকা ছুট্টুকে নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ। সেখানে ছুট্টু নিজেই বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির কাছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া দাবি জানান। ভিডিওটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি নেতা এ্যানি চৌধুরীর নজরে পড়েন। এতে তারেক রহমানের নির্দেশে ছুট্টুর চিকিৎসার দায়িত্বভার নেন এ্যানি চৌধুরী। প্রথমে তিনি মোবাইলফোনে ভিডিও কলে কথা বলে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি, চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি এম বেল্লাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এম ইউছুফ ভূঁইয়া, জেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি বদরুল ইসলাম শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলসহ আরও অনেকে।  

এদিকে, এ্যানি চৌধুরীকে কাছ পেয়ে ছুট্টু নিজেই স্লোগান তোলেন। তার দাবি, ‘আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজন তাকে কুপিয়েছে। শেখ হাসিনা ভারত পালিয়েছে। ইয়াছিন দেশেই পালিয়ে আছে, তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপির জন্য রক্ত দিয়েছে, প্রয়োজনে আরও রক্ত দেবে। শেখ হাসিনারও বিচার হতে হবে।’

এ্যানি চৌধুরীকে ছুট্টু জানান, হাজিরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এলাকায় থাকতে না পেরে সিদ্ধিরগঞ্জে সানারপাড় এলাকায় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে অবস্থান নেন। ২০১৬ সালে বিএনপির মিছিলে গেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজন তাকে আটক করে। সেখানে প্রথমে তার হাতের আঙ্গুল কেটে দেয়। একে একে তার শরীরে উপুর্যপুরি কুপিয়ে মৃত ভেবে তাকে ফেলে রাখে।

এ্যানি বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ছুট্টুর চিকিৎসার ভার আমি নিয়েছি। ইতোমধ্যে পিজি হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে কথা বলেছি। তাকে উন্নত চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করা হবে। তাকে একটি ঘর করে দেওয়া হবে। তার ছেলের পড়ালেখার দায়িত্বও আমি নিয়েছি। তার আর আমাদের একই দাবি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

স্থানীয়রা জানায়, ছুট্টু মুসলিমাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। তার একটি সুন্দর সংসার ছিল। হামলার পর তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। প্রথমদিকে তার স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে পাশে থাকলেও পরে স্ত্রী অন্যত্র চলে যায়। সন্তানের দায়িত্বও আর নেননি। সন্তান এখন এতিমখানায় বড় হচ্ছে। পরে তাকে দেখাশোনার জন্য গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি ও এক চাচাতো ভাইকে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে রেখেছে তার ভাইয়েরা। তিনি এখনো নিজে খাবার খেতে পারেন না, হাতে তুলে দিতে হয়। কারণ হাতের আঙ্গুলগুলে মুষ্ঠিবদ্ধ করার শক্তি তার নেই। একা উঠে দাঁড়াতেও পারেন না তিনি।

ছুুট্টুর ভাই বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ছুট্টু তিন মাস ইউরোপ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিল। ৬ মাস ওই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছে। তার চিকিৎসায় ৪২ লাখ টাকা খরচ করেছি। এরপর বাড়িতে এনেও তাকে বেডে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

ছুট্টুর ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে ছুট্টু স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবে না। তখন চিকিৎসকরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। আর্থিক সংকট ও আওয়ামী লীগের লোকজনের কারণে আমরা তা পারিনি। মামলা করতে গেলেও আওয়ামী লীগের লোকজনের ভয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি।’