‘আব্বু আর কোনোদিন আমাকে ডাকবে না’

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:২১
শেয়ার :
‘আব্বু আর কোনোদিন আমাকে ডাকবে না’

‘আমার আব্বু আর কোনোদিন আমাকে মা বলে ডাকবে না, আমি আর কোনোদিন আব্বুকে দেখতে পাবো না। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।’ বুকফাটা কান্নায় এভাবেই বলছিল ইরাকে নিহত প্রবাসী মো. আজাদ খানের মেয়ে আবিনা আক্তার কথা (১২)।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের হোসেন মণ্ডলপাড়ার ইয়াজ উদ্দিন খানের ছেলে মো. আজাদ খান (৪৫) তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে ইরাক যান। পরিবারের স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়েই প্রবাসে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে এখন লাশ হয়ে ফিরতে অপেক্ষা করছে ইরাকের মর্গে।

গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে আজাদের বাড়িতে দেখা যায়, কান্নায় ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার। বাড়ির বাইরে থেকেও ভেসে আসছিল আহাজারি। নিহত আজাদের মা বিলাপ করতে করতে সন্তানের লাশ দেশে ফেরত চান। তার স্ত্রী ময়না বেগম আর মেয়ে কথার আত্মচিৎকারে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো এলাকায়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজাদ ইরাকের বাগদাদের কাজুমিয়াতে কাজ করতেন। প্রবাসে যাওয়ার তিন মাসের মাথায় তিনি নিখোঁজ হন। গত এক সপ্তাহ ধরে তার কোনো খোঁজখবর নেই। গত বৃহস্পতিবার রাতে আরেক প্রবাসী লিটনের ফোনে আজাদের পরিবার জানতে পারে, আজাদকে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে লাশ বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয় শহরের ময়লার ভাগাড়ে। পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দুর্গন্ধ পেয়ে বস্তা খুলে আজাদের লাশ উদ্ধার করে। বর্তমানে তার মরদেহ বাগদাদের একটি মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্ত্রী ময়না বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি অনেক ধারদেনা করে বাবুল নামের এক দালালের মাধ্যমে স্বামীকে ইরাক পাঠাই। বাবুলকে যে কাজ দেওয়ার কথা বলেছিল, সেটা না দিয়ে অন্যত্র পাঠায়। আমার স্বামী বারবার বাবুলকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি। বাবুল যদি ফোন ধরতো, হয়তো তার এ পরিণতি হতো না। স্বামীর হত্যার বিচার চাই।’

যোগযোগ করা হলে মুঠোফোনে দালাল বাবুল দাবি করেন, তিনি আজাদকে কুমিল্লার সোহাগ নামের এক যুবকের কাছে দিয়েছিলেন। পরে সোহাগ আজাদকে ইরাকের এক হোটেল মালিকের বাড়িতে পরিচ্ছন্নতার কাজে পাঠায়। এর মধ্যে আজাদ খুন হয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। এ ঘটনায় বাংলাদেশ এম্বাসিতে অভিযোগ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গোয়ালন্দ উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ প্রশাসক মো. নিজাম উদ্দিন জানান, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।