বাতি জ্বলে, তবু গাড়ি চলে ইশারায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাতি জ্বলে, তবু গাড়ি চলে ইশারায়


রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়। ১৭ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টা। নিয়ম অনুযায়ী লাল-নীল সিগন্যাল বাতি জ¦লছে। তবে লাল বাতি জ¦লার পর সাইসাই করে গাড়ি চলছে। আবার নীল বাতি জ¦লার পরও গাড়ি থেমে আছে সিগন্যালে। যানজট নিরসনে রাজধানীতে পরীক্ষামূলক চালু হওয়া স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত চালু করলেও সেটা মানা হচ্ছে না। আশানুরূপ ফলও মিলছে না। ফলে সেই পুরানো হাত ইশারা, লাঠি আর বাঁশি বাজিয়েই সড়কের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে ট্রাফিক পুলিশ।

জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট আবদুল্লাহপুর থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত সাতটি ইন্টারসেকশনে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পরীক্ষামূলক স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত পদ্ধতি চালু করা হয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) ও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন যৌথভাবে প্রকল্পে কাজ করছে। রাজধানীতে পরীক্ষামূলক ইন্টাসেকশনের মধ্যে কারওয়ান বাজারও রয়েছে। এ ছাড়া স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত চালু হওয়া বাকি মোড়গুলো হলো- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামটর, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও জাহাঙ্গীর গেট।

ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যানবাহনের চাপের কারণে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তাল মেলানো যাচ্ছে না। হাতের ইশারাতেই যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করতেই সিগন্যাল বাতি কার্যকর করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) সুফিয়ান আহমেদ বলেন, কিছুদিনেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন বেশির ভাগ যানবাহন সংকেত মেনে চলাচল করছে। অভ্যস্থতা তৈরি হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবাই বিষয়টি মেনে নেবেন। যারা আইন অমান্য করছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। পথচারীদের বিষয়েও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য মানুষকে সিগন্যাল বাতিতে অভ্যস্ত করানো বলে জানান বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা অটোমেটিক ও ম্যানুয়াল দুটো পদ্ধতিই রেখেছি। ব্যস্ত সময়ে পুলিশ বক্স থেকে বাতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক নিম্নআয়ের দেশেও ট্রাফিক সিগন্যাল আছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সকালে অফিস শুরুর সময় এবং বিকালে অফিস ছুটির সময় সংকেত বাতি দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। মাঝেমধ্যে পুলিশ বক্স থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বাতিগুলো সময় বাড়িয়ে কিংবা কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে ম্যানুয়ালি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

তবে সিগন্যাল বাতিতে ইতোমধ্যে কিছু কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়েছে বলে জানান ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার। তিনি বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা পথচারী নিয়ন্ত্রণ করা। তারা সিগন্যাল বাতি অনুসরণ না করে রাস্তা পার হতে চান। এই পদ্ধতিকে কার্যকর করতে হলে পথচারী ও চালককে সবচেয়ে বেশি সচেতন হতে হবে।

ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কের গাড়ির সংখ্যা সবসময় একই রকম থাকে না। অনেক সময় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। ফলে একদিকের গাড়ি সংখ্যা বেশি থাকে আবার অন্য দিকে কম থাকে। তাই সিগন্যাল কঠোরভাবে অনুসরণ করলে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। তখন ঝামেলা এড়াতে সিগন্যাল বাতির কাউন্টডাউন শেষ হওয়ার আগেই কিছু সময় সড়কের গাড়ি ছেড়ে দিতে হয়। আর এখনো পরীক্ষামূলকভাবে বাতিগুলো চালানো হচ্ছে। যখন পুরোপুরি শুরু হবে, তখন সিগন্যাল বাতির নিয়ম মেনে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির বিষয় সম্পর্কে অনেক গাড়ির চালকই জানেন না। গতকাল দুপুরে ফার্মগেট মোড়ে প্রাইভেটকার চালক ইশারোফ হোসেন বলেন, রাস্তায় বাতি আমরা খেয়াল করি না। ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারাতেই আমরা গাড়ি থামাই, আবার চালু করি। তবে সিগন্যাল ব্যবস্থা কার্যকর হলে আমরা বাতি দেখেই গাড়ি থামাব এবং চালাব।

নব্বই দশকে ঢাকা মহানগরীতে অটোমেটিক সিগন্যাল সিস্টেম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতি-পোস্ট স্থাপনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তবে সড়ক ব্যবস্থাপনার কোনো উন্নতি হয়নি।