হঠাৎ আফগানিস্তানে কেন মামুনুল হক

অনলাইন ডেস্ক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৫
শেয়ার :
হঠাৎ আফগানিস্তানে কেন মামুনুল হক

হঠাৎ আফগানিস্তান সফরে গেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হকসহ সাতজন। বুধবার সকালে দেশটির রাজধানী কাবুলে গিয়ে পৌঁছান তারা।যদিও এটি দলীয় কোনো সফর নয় বলে দাবি করছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। 

তার পরও এই সফর ঘিরে নানা প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ‘ইমারাতে ইসলামিয়া’ বা তালেবান সরকারের আমন্ত্রণে সফরকারী দলটি আফগানিস্তানে গেছে। কাবুলে তালেবান সরকারের প্রধান বিচারপতি, একাধিক মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করার কথা রয়েছে।

বিশেষভাবে মানবাধিকার ও নারী অধিকার বিষয়ে পশ্চিমা মহলে যে সমালোচনা রয়েছে, সে প্রসঙ্গে তারা বাস্তব অবস্থান সরাসরি পরিদর্শন করবেন বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। 

তবে ঠিক কী কারণে মামুনুল হক এ সফরে অংশ নিচ্ছেন-এমন প্রশ্নে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ জানান, নারীর অধিকার হরণ বা লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা, তা স্বচক্ষে দেখার জন্যই তারা গেছেন। কারণ অনেক সময় বিভ্রান্তিকর ধারণা তৈরি হয়। একটি শ্রেণি নারীর অধিকার প্রশ্নে তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার করে। সেই বাস্তবতা দেখতে গেছেন তারা।

এদিকে সফরের সময় নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ খেলাফত মজলিসের আমির ও তার প্রতিনিধিদল এমন এক সময়ে এই সফর করছেন, যখন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তার ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ অবাক হয়েছেন। তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারা আফগানিস্তানে গেছেন এমন কোনো নজির নেই।এই প্রথম কোনো দলের নেতাদের আফগানিস্তান সফরের কথা শুনছেন তারা।

তবে সফরটিকে একান্তই ‘ওলামা সমাজের সফর’ বলে দাবি করেন মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, এটি কোনো রাজনৈতিক সফর নয়। সঙ্গে থাকা সদস্যদের অনেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এর আগে ২০০১ সালেও ওলামা সমাজ তালেবান শাসিত আফগানিস্তান সফর করেছিল।

সফরে মামুনুল হক ছাড়াও প্রতিনিধিদলে রয়েছেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হামিদ (মধুপুরের পীর), মাওলানা আব্দুল আউয়াল, ময়মনসিংহ বড় মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল হক, বারিধারা মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা হাবিবুল্লাহ মাহমুদ কাসেমী, জমিয়তের নেতা মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী ও ময়মনসিংহের মাওলানা মাহবুবুর রহমান।

দলটি সফরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সফরের সময় দুই দেশের আলেমদের মধ্যকার সম্পর্কান্নয়নসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়গুলোকে আলোচনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সফরে মামনুল হকসহ প্রতিনিধিদলটি মধ্যএশিয়ার আরেও কয়েকটি দেশ সফর করবেন বলে জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে যান মামনুল হকসহ প্রতিনিধিদলটি। সেখান থেকে দুবাই হয়ে বুধবার সকালে কাবুলে পৌঁছান তারা। 

তবে এই সফরের উদ্দেশ্য নিয়েই মূল বিতর্ক। বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবান সরকার এখনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি (রাশিয়া ছাড়া)। এমন এক সময়ে তালেবানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা রাজনৈতিকভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদের মনে করছেন, এই ধর্মভিত্তিক দলটি হয়তো ইসলামী শাসনের মডেল নিয়ে ধারণা পেতে আফগানিস্তান সফর করছে। বাংলাদেশে এই মডেল কিভাবে কাজে লাগানো যায় এবং সে বিষয়ে পথ খুঁজতে চাচ্ছে দলটি।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন,‘ফরমালি যেটা বিভিন্ন সোর্স থেকে শুনি বা জানি যে, আফগানিস্তানের ইসলামি শাসনের মডেল নিয়ে বাংলাদেশের একটা শ্রেণির মানুষের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।’

তবে এমন বিষয় নাকচ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘যদি কোন দেশে কোরআন এবং সুন্নাহ বা শরীয়াহ রাষ্ট্র কায়েম হয় তখন সেখানে শরীয়াহ আইন বাস্তবায়নের প্রশ্ন আসে।আমাদের দেশে তো এই আইন বাস্তবায়ন করার প্রশ্ন নাই, যেহেতু ইসলামিক সরকার নাই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আফগানিস্তানের শাসন, সরকার ব্যবস্থা এক রকম, বাংলাদেশের শাসন ও সরকার ব্যবস্থা ভিন্ন রকম। অতএব কেউ চাইলেও সেটা প্রয়োগ করতে পারবে না।’

আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা তালেবানদের সঙ্গে খেলাফতে মজলিস বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে সে সম্ভাবনা নাকচ করে দেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘এই পর্যন্ত কারেও সঙ্গে কোনোদিন দেখাও হয় নাই, যোগাযোগও হয় নাই, কথাও হয় নাই।’

তবে সফরের বিষয়ে দলীয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি কেন দেওয়া হলো-এই প্রশ্নে জবাবে মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, মামুনুল হকের দুটি পরিচয় আছে, তিনি একজন আলেম, আবার রাজনৈতিক দলের প্রধান। সেই হিসেবে অফিস থেকে সংবাদটি সবাইকে জানানো হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা