ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি নিয়ে স্টারমার ও ট্রাম্পের দ্বিমত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দু‘দিনের যুক্তরাজ্য সফরের দ্বিতীয় দিনটি ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথম দিনটি রাজকীয় ও ঐশ্বর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানাদির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হলেও শেষ দিনটি অর্থাৎ ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ছিল ‘বিজনেস’ এবং নীতি, বাণিজ্য ও রাজনৈতিক আলোচনা কেন্দ্রিক।
এ দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমারের মধ্যে প্রযুক্তি ও বাণিজ্য এবং কৌশলী ও বৈদেশিক নীতি বিষয়ক বেশ কিছু দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষরিত চুক্তির মধ্যে অন্যতম একটি বড় চুক্তি হল ‘টেক প্রস্পারিটি ডিল‘ যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পারমাণবিক শক্তি ও কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিষয়ে যুক্তরাজ্যে মার্কিন বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদান করবে।
দ্বিপাক্ষিক ও কৌশলগত আলোচনার মধ্যে ছিল- অভিবাসন, গাজায় মানবিক বিপর্যয়, ইউক্রেন ও রাশিয়া সংঘাত ইত্যাদি বিষয়ক।
বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এই সফরকে ‘ঐতিহাসিক দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর’ বলে বর্ণনা করে বলেন, এটি ‘আমাদের দুই দেশের অনন্য বন্ধন উদযাপনের একটি মুহূর্ত।’
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র স্বীকৃতির প্রশ্নে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি মতপার্থক্যে স্পষ্ট হয়ে উঠে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন: ‘এ বিষয়ে আমার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মতপার্থক্য আছে — আসলে এটি আমাদের অল্প কিছু মতবিরোধের অন্যতম।’
এ বিষয়ে ট্রাম্প মূলত কথোপকথনকে ঘুরিয়ে নিয়ে যান গাজায় চলমান জিম্মিদের দুর্দশা এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার দিকে।
যুক্তরাজ্য কর্তৃক ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির বিষয়ে রয়টার্স জানায় যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার রাষ্ট্রীয় সফর শেষে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করার পর আগামী সপ্তাহান্তে (২০-২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জুলাই মাসেই সতর্ক করেছিলেন যে, যদি ইসরায়েল গাজায় মানবিক দুর্দশা লাঘবে কোনো পদক্ষেপ না নেয় এবং হামাসের সঙ্গে চলমান প্রায় দুই বছরের যুদ্ধবিরতি না করে, তাহলে যুক্তরাজ্য এই স্বীকৃতি প্রদানের পদক্ষেপ নেবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন নেওয়ার আগে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন রুশ নেতা ভ্লাদিমির পুতিন তাকে ‘সত্যিই নিরাশ’ করেছেন। ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি ভেবেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে ইউক্রেন সংঘাত সমাধান করাটা সবচেয়ে সহজ হবে।
অভিবাসন নিয়ে স্টারমারকে পরামর্শ দেওয়ার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাব করেছেন যে স্যার কিয়ার স্টারমারকে ছোট নৌকায় অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা উচিত, এবং তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে অবৈধ অভিবাসন দেশগুলোকে ‘ভেতর থেকে ধ্বংস’ করে দিতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরো জানান যে, আফগানিস্তানের তালেবান গোষ্ঠীর কাছ থেকে বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
সংবাদ সম্মেলন ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চেকার্স থেকে স্টেন্সটেড বিমান বন্দরে যাওয়ার জন্য বের হন। তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি স্টানস্টেডে পৌছার পূর্বে সামান্য হাড্রোলিক সমস্যার কারণে একটি স্থানীয় এয়ারফিল্ডে জরুরি অবতরণ করে। তবে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। অবশেষে, সন্ধ্যা প্রায় ছয়টার সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন:
রোগীর পেটে জীবন্ত মাছি!