নিলামে বিক্রি হল ৯৩ টন চা

চৌধুরী ভাস্কর হোম, মৌলভীবাজার
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
নিলামে বিক্রি হল ৯৩ টন চা

শ্রীমঙ্গলের বাতাসে যেন ভেসে আসে এক অদৃশ্য সুবাস চায়ের। সারি সারি সবুজ বাগান ঘেরা এই শহরের বুকেই দাঁড়িয়ে আছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা নিলামকেন্দ্র। গতকাল সকাল থেকে ব্যবসায়ীদের কোলাহল, ব্রোকার্স হাউসের ডাক আর ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে চারদিক। এখানে প্রতিটি কেজি চা বিক্রির সঙ্গে যুক্ত থাকে শুধু বাজারদর নয়, বরং ঐতিহ্য, শ্রম আর ইতিহাসের সুবাস।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১৯তম নিলামটি যেন ছিল উৎসবের আরেক নাম। বিক্রির জন্য আনা হয়েছিল ১,১৫,৬২৩ কেজি চা। দুপুরের আগেই ৮০ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৯৩ টন চা বিক্রি হয়ে যায়। আর এই নিলামের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) তৈরি গ্রিন টি, যা প্রতি কেজি ১,২৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এককথায় নিলামের তারকা। অন্যদিকে হামিদিয়া চা বাগানের গুণগত মানসম্পন্ন ব্ল্যাক টি সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে ক্রেতাদের নজর কাড়ে। ক্রেতাদের ভিড়ে মুখর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা নিলাম কেন্দ্র। 

জালালাবাদ, শ্রীমঙ্গল, রূপসী বাংলা, সোনার বাংলা ও জি এস। এ জেলার পাঁচ স্বনামধন্য ব্রোকার্স হাউস নিলামে অংশ নেয়। কারও হাতে গ্রিন টি, কারও হাতে কালো চায়ের স্যাম্পল। দর হাঁকাহাঁকি, চোখাচোখি আর হিসাবের খাতা মেলাতে মেলাতে যেন তৈরি হয় আলাদা এক নাটকীয় আবহ। সোনার বাংলা ব্রোকার্স যখন বিটিআরআইয়ের ১,২৯৩ কেজি গ্রিন টি সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করে, তখন পুরো হলে মুহূর্তের জন্য যেন একটুখানি শ্বাসরুদ্ধ নীরবতা নেমে আসে।

ক্লোনেল চা বাগানের তরুণ ব্যবস্থাপক রনি ভৌমিক বললেন, নিলামকে আরও গতিশীল করতে সব বাগানকে একসঙ্গে আনতে হবে। এতে বাজারে বৈচিত্র্য বাড়বে, চা শিল্পের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।

বাংলাদেশ চা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএস এন মুনিরের কণ্ঠেও আশাবাদ- কিছু পরিবেশগত কারণে ক্রেতা কমলেও খুব শিগগির শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্রই হবে দেশের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র।

২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উদ্বোধন করেছিলেন এ নিলামকেন্দ্র। সেদিন থেকে শুরু হওয়া যাত্রা আজ শ্রীমঙ্গলকে শুধু দেশের নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গেও আরও গভীরভাবে যুক্ত করছে।

চা বোর্ড জানায়, চলতি অর্থবছরে দেশের তিনটি নিলামকেন্দ্রে মোট ১২২টি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৪৮টি আয়োজন হবে এখানেই শ্রীমঙ্গলে। 

নিয়মিত নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়, যদিও এর কার্যক্রম নিয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চা নিলাম কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর থেকে বাগান মালিক, ব্রোকার ও ব্যবসায়ীরা এখানে উপস্থিত হয়ে চা কেনাবেচা করেন, যা এই কেন্দ্রটিকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনস্থলে পরিণত করেছে। 

চা কেবল একটি পানীয় নয়; এটি এক সংস্কৃতি, এক ঐতিহ্য, এক গর্ব। শ্রমিকদের হাতের ঘাম, বাগানের নীরব সবুজ, আর নিলাম হলের প্রাণচঞ্চলতা। সব মিলিয়ে শ্রীমঙ্গলের নিলাম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে চায়ের রাজধানী। এখানে বিক্রি হয় শুধু চা নয়, বিক্রি হয় স্বপ্তিহাস আর বাংলাদেশের সুগন্ধময় পরিচয়।