পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৬

নওগাঁ প্রতিনিধি
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৫৮
শেয়ার :
পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ৬

নওগাঁয় পুলিশ পরিচয়ে আসামি গ্রেপ্তার করতে যাওয়ার সময় এক নারীসহ ভুয়া চার পুলিশ সদস্য এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এসময় ভুয়া পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে দুটি ডিএমপি ও ডিবি পুলিশের পোশাক, দুটি হ্যান্ডকাফ, দুটি ডেমো শর্টগান ও একটি ডেমো পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার এসব তথ্য জানান।

এর আগে গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের জলিল চত্বর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া উত্তরপাড়া এলাকা থেকে ওই দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ভুয়া পুলিশ সদস্য পরিচয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ঢাকার উত্তর ভাটারা এলাকার আবুল বাসার শরিফের স্ত্রী সাবরিনা (২৯), নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ পূর্বাচল এলাকার হাজী আহম্মেদের ছেলে সাইফুল ইসলাম জিন্নাত (৪৫), নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ কুলিয়াদি এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে দ্বীন ইসলাম (৩৮) ও ঢাকার রমনা থানার বড় মগবাজার এলাকার শুকুর শেখের ছেলে ফুল মিয়া (৪২)।

গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- নওগাঁ শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার নূর ইসলামের ছেলে আরিফ (২৯) এবং শহরের মাদার মোল্লা বলিরঘাট এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে ফরহাদ হোসেন ওরফে শোভন (২৯)।

ভুয়া পুলিশ পরিচয়দানকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জলিল চত্বর চেকপোস্টে বগুড়া থেকে রাজশাহী অভিমুখী একটি মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি করলে মাইক্রোবাসে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি ডেমো পিস্তল, দুটি শর্টগান, দুটি হ্যান্ডকাফ এবং ডিএমপি ও ডিবি পুলিশের পোশাক পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মান্দা থানার গোবিন্দপুর এলাকায় শুটিংয়ের জন্য যাচ্ছেন বলে পুলিশকে জানায়। কিন্তু তারা কোথায় থাকবেন, কী শুটিং করবেন এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে তাদের মোবাইল তল্লাশি করলে একটি জিডির কপি পাওয়া যায়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেন, তাদের কর্মচারী নওগাঁর মান্দা থানার গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ এবং ডকুমেন্টস আত্মসাৎ করে পালিয়ে এসেছেন। সোহেল রানাসহ তার মা-বাবার নামে তারা ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেছেন। সেই মামলার তদন্ত করার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই মামলায় সোহেল রানা ও তার মা-বাবাকে পুলিশের পোশাক এবং শর্টগান নিয়ে অপহরণ করার উদ্দেশে তার বাড়িতে যাচ্ছিলেন।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে পুলিশ পরিচয়ে কোনো অপকর্ম ও চাঁদাবাজি করছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের চারজনের নামে নওগাঁ সদর থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।’

এদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে লাইভস্টক ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত এক নারী স্টাফের কাছে গিয়ে দুই যুবক নিজেদেরকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয় দেন। একপর্যায়ে তারা ওই নারী স্টাফকে আওয়ামী সমর্থক তকমা দিয়ে তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। ওই নারী স্টাফ তার চাচাতো ভাইকে চাঁদা দাবির বিষয়টি জানায়। তার চাচাতো ভাই তখন গণঅধিকার পরিষদের পরিচয় দেওয়া নেতার মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবির বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চায়। তখন তারা সামনাসামনি দেখা করতে বলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সামনাসামনি দেখা করলে গণঅধিকার পরিষদের পরিচয় দেওয়া ওই দুই নেতা জানায়, ২০২২ সালে লিটন ব্রিজের নিচে চায়ের দোকানে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার আরিফের বাবাকে মারধরের ঘটনায় সে থানায় একটি মামলা দায়ের করবে। তাকে চাঁদা না দিলে সে মামলায় আসামি হিসেবে ওই নারী স্টাফের নাম সংযুক্ত করবে এবং তার চাকরির ক্ষতি করবে মর্মে তার কাছ থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার ওই টাকা দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঠিকাদারির লাইসেন্স করবেন বলেও তাদেরকে জানায়।’

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘তাদের মধ্যে আলোচনার একপর্যায়ে তাদেরকে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। গতকাল চাঁদার ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য চন্ডিপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় গেলে ওই নারী স্টাফের চাচাতো ভাই তাদেরকে ১০ হাজার টাকা দেন। চাঁদার বাকি টাকা না পাওয়ায় তাদের মাঝে কথা কাটাকাটির শুরু হয়। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের সামনে ওই দুই যুবক চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে। পুলিশ তখন তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ওই নারী স্টাফ তাদের নামে থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারজানা হোসেন, নওগাঁ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকীসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।