স্মৃতিগুলো নিয়ে এখনও বিভোর থাকি: রুনা খান

কুদরত উল্লাহ
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯:৪৬
শেয়ার :
স্মৃতিগুলো নিয়ে এখনও বিভোর থাকি: রুনা খান
ছবি : সংগৃহীত

অভিনয়ে দারুণ মাপকাঠি তার। চরিত্র নির্ভর যে কোনো গল্পেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে নিদারুণ অভিনয় করে যেতে পারেন। আর এমনটা ঘটে জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী রুনা খানের বেলায়। মঞ্চ থেকে নিজেকে মেলে ধরে দীর্ঘ একটা সময় পাড় করেছেন তিনি লাইট-ক্যামেরা ও অ্যাকশনে।

এখন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে নিয়মিত ওয়েব প্ল্যার্টফর্ম ও ফ্যাশন শো-গুলোতে বেশ দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার সম-সাময়িক ব্যস্ততা ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা হলো দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনের সঙ্গে।

আমাদের সময়: কেমন আছেন আপনি?

রুনা খান: অনেক ভালো যাচ্ছে সময়। ভালো আছি।

আমাদের সময়: সাম্প্রতিক ব্যস্ততা কি নিয়ে?

রুনা খান: বাংলাদেশে একটি ফ্যাশন লেভেল ‘আমি ঢাকা’র শোস টপার হয়ে হাঁটলাম গত শুক্রবার। শো-টা হয়েছে সোনার গাঁওয়ে বড় সর্দার বাড়িতে। এটা একটা দারুন অভিজ্ঞতা। এমনিতেই রানওয়েতে হাঁটা সবসময়ই এনজয় করি। এই তো, সাম্প্রতিক ব্যস্ততা আসলে এটাকে ঘিরেই ছিল। প্রায় ৪ মাসের পরিকল্পনা ও  প্রস্তুতির পর কাজটা শেষ হলো।

আমাদের সময়: দীর্ঘ বছর মিডিয়াতে কাজ করছেন, বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

রুনা খান: হ্যাঁ, পেশাদার অভিনেতা হিসেবে সেই ২০০৫ সাল থেকে কাজ শুরু করেছি, এখন ২০২৫ সাল। এই ২০ বছর অনেক দীর্ঘ সময়। এর জন্য কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি যাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। যারা আমাকে যোগ্য মনে করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আসলে সবার প্রতিই আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। খুবই আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে যে, আমি দীর্ঘ একটা পথ অভিনয়ে পাড় করে যাচ্ছি। যতদিন সুস্থ আছি, বেঁচে আছি ততদিন অভিনেত্রী ও মডেল হিসেবে কাজ করে যেতে চাই। এখন দেখা যাক সামনের সময়টা জীবনটা কেমন হয়।

আমাদের সময়: ওয়েবে আপনি এখন বেশ নিয়মিত। অভিনয়ের জায়গা কতটুকু পাচ্ছেন?

রুনা খান: অভিনয়শিল্পী হিসেবে দেশের যতগুলো মাধ্যম আছে সর্বত্রই থাকতে চাই। আমি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের একজন কর্মি হিসেবে ২০০২ সাল যোগ দিয়েছিলাম মঞ্চে। তারপর ২০০৫ সালে সিসিমপুরের মধ্য দিয়ে পেশাগত জায়গা থেকে টেলিভিশনে অভিনয় করা শুরু। তারপর ২০১৭ সালে সিনেমার রঙিন পর্দায় দেখা গেছে ‘হালদা’, ‘ছিঁটকিনি’র মাধ্যমে। তারপর প্রথম ওয়েবে কাজ করি সেটাও ২০১৯ সালে। হইচইয়ে মুক্তি পেয়েছিল ২০১৯ সালে ‘কষ্ট নীড়’। এটা আমার প্রথম ওয়েব ফিল্ম। আমার কাছে আসলে মনে হয় কী একজন অভিনয়শিল্পীর অভিনয় করার যতগুলো মাধ্যম আছে তাতে আমার কাজটা একই সেটা হচ্ছে অভিনয় করা। এখন মাধ্যমগুলো যখন পরিবর্তন হয়, তখন কৌশলগত কিছু পরিবর্তনও ঘটে যায়। ওয়েবের ব্যাপারে আমার কাছে ইতিবাচক দিক হলো বাজেটটা ভালো পাওয়া যায় সত্যি বলতে। তাই নির্মাতাদের গল্প বলার ধরন বা নির্মাণ কৌশল, সকল কিছুর প্রতিই তখন নির্মাতারা মনযোগি হতে পারেন। অভিনয়শিল্পীদের ক্ষেত্রে ওয়েবের গল্প, চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে এসবের পেছনে শ্রম দেওয়া হয়। রিহার্সালও ভালো ভাবে করা যায়। সেটা নাটকে আসলে সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই ওয়েবে ভালো কিছু পাওয়া যায় কিংবা দেখা যায়। যেটা আসলে অভিনয়শিল্পীর জন্য দিনশেষে খুবই জরুরি দরকার।

আমাদের সময়: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি বেশ অ্যাক্টিভ। আপনার পোস্টগুলো সচেতনতার বার্তা বহন করে। এটা নিয়ে কিছু বলুন...

রুনা খান: এট আমার ফেসবুক কিংবা পেজে যেটাই বলেন না কেন, সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৯৫ ভাগই হচ্ছে আমার কাজ রিলেটেড। ব্যক্তিগত বিষয় আমার ১ শতাংশও থাকে না। আর যদি বলেন শুধু প্রোফাইলের বিষয়, সেটাও ৫ শতাংশের বেশি না। এখন আমার কাজের খবরে কেউ যদি সচেতন বার্তা হিসেবে মনে করেন তাহলে তো বেশ ভালো সংবাদ এটা।

আমাদের সময়: ব্যক্তিগত জীবন কেমন যাচ্ছে?

রুনা খান: জ্বী, পরিবার নিয়ে খুব ভালো আছি। সবাই সুস্থ আছি।

আমাদের সময়: দিনশেষে নিজেকে সময় দেন?

রুনা খান: হ্যাঁ, অবশ্যই। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, নিজেকে তো সময় দিতেই হয়। আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষেরই দেওয়া উচিত।

আমাদের সময়: সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে বলুন...

রুনা খান: তিনটি সিনেমার শুটিং শেষ করে রেখেছি। এর মধ্যে একটি মাসুদ পথিকের ‘বক’ ও আরেকটি কৌশিক শংকর দাসের ‘দাফন’। এ দুটে সিনেমার শুটিং ও ডাবিং সবই শেষ। এখন সিনেমা দুটি কবে নাগাদ মুক্তি পাবে তা প্রযোজক ও পরিচালকরাই ভালো বলতে পারবেন। আর অন্যটি জাহিদ হোসেনের ‘লীলা-মন্থন’ নামের সিনেমার শুটিং মাত্রই শেষ করেছি। এখন সামনের মাস থেকে ডাবিং শুরু হবে বলে আশা করছি। অন্যদিকে, নতুন আরেকটি সিনেমার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সেটি হচ্ছে আলী জুলফিকার জায়েদীর ‘চলচ্চিত্র’। সব কিছু ঠিক থাকলে নতুন এই সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে আসন্ন শীতে। সামনে আরও একটা ফ্যাশন শোতে হাঁটারও কথা আছে। দেখি কি হয় জানাবো।

আমাদের সময়: যদি বলি নিজেকে ব্যাখ্যা করতে, কিভাবে করবেন?

রুনা খান: নিজেকে নিয়ে তেমন কিছু ভাবার নেই আমার। তবে আমি আসলে একেবারে বাঁচার আনন্দে বাঁচি। মানে, আমি যে বেঁচে আছি, সুস্থ আছি বা আমার পরিবারের সবাই যে সুস্থ আছে, এটাকেই আমি মনে করি প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তার সব চেয়ে বড় আর্শিবাদ। এটাই আমার কাছে বড় প্রাপ্তি। এর থেকে আর আলাদা করে ব্যাখ্যা করার মতো কিছু নেই। আমি খুবই ক্ষুদ্র একজন মানুষ।

আমাদের সময়: অভিনয়ের ব্যস্ততা আর ব্যক্তি জীবনের ব্যস্ততার মধ্যে কি কোনো তফাৎ খুঁজে পান?

রুনা খান: হ্যাঁ, অবশ্যই। দুই ব্যস্ততার মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাই। আমার বিয়ে হয়েছে ২০০৯ সালে। তারপর থেকেই আমি আমার জীবনের সময়টাকে ভাগ করে নিয়েছি। বিয়ের প্রথম তিন বছর আমি কোনো কাজ করেনি কারণ তখন আমি সন্তান ধারণ করি, তারপর সন্তানের জন্ম। সে সময়টাতে আমার মোটামুটি লম্বা সময় বিরতি ছিল। এরপর যখন আমি অভিনয়ে আবারও নিয়মিত হলাম। তখন আবারও সময়টাকে ভাগ করে নিয়েছি যে, মাসের ৫ দিন কাজের জন্য। বাকি সময়টুকু আমার পরিবারের জন্য বা আমার নিজের জন্য। তারপর আমার কাজের ওপর ডিপেন্ড করতো কত দিন আমার অভিনয়ের জন্য আর কতদিন আমার পরিবাররে জন্য। বাকি সময়টুকুটও এই নিয়মের মধ্যেই থাকার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আর ব্যক্তি জীবনের ব্যস্তটাটা আসলে আমার কাছে এতেটা লাগে না। কারণ আমার ঘরের জীবনটা এত আরামের। আমি অনেকটা শান্ত নদীর মতো জীবন যাপন করি। আমার স্বামী, সন্তান তাদের সঙ্গে কাটানো সময় বা আমার সন্তানের বেড়ে ওঠা। এ সব কিছুর মধ্যেই এত আরাম, শান্তি, স্বস্তি পাই। তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার দুটো জীবনই খুব সুন্দর।

আমাদের সময়: সামনে শুটিং কিংবা ঘুরতে দেশের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে?

রুনা খান: আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, আমার পুরো পরিবার। আমার স্বামী এবং মেয়ে আমরা সাধারণত বছরে বা দুই বছরে দেশের বাইরে বেড়াতে যাই। তো এ বছর জুনে আমরা গিয়েছিলাম। আমেরিকা ও তুরষ্কে এই দুই দেশে প্রায় একমাসের মতো ছুটি কাটিয়ে এসেছি। তাই খুব কাছকাছি সময়ে আর দেশের বাইরে এ বছর আর যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে আগামী বছর আবারও কোনো জায়গায় যাওয়ার চিন্তা করব। আর শুটিংও এ বছরে এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে যাওয়ার প্রস্তাব পাইনি তাই আপাতত কোনো পরিকল্পনাও দেখছি না।

আমাদের সময়: বাসায় বসে নাটক কিংবা সিনেমাগুলো দেখা হয়?

রুনা খান: হ্যাঁ, একদম। আপনাকে শুরুতেই বলছিলাম যে, আমার মাসের ৫ থেকে ৭ দিনের বেশি শুটিং রাখি না। বাকি সময়টুকুতে ঘরে বসে টেলিভিশন দেখা, গান শোনা মুভি দেখা। এভাবেই অবসর সময়টা কাটে। আর ওটিটিতে আমাদের দেশের যে কন্টেন্ট গুলো হচ্ছে ওগুলো নিয়মিত দেখি। শুধু আমার না অন্যদের কাজও দেখা হয়। যেমন তাকদীর, মহানগর খুবই দারুণ লেগেছে। এ দুটো কাজে আমি অভিনয় করিনি কিন্তু খুব ভালো লেগেছে দেখে। এছাড়া ঘরে বসেই তো এখন অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স থেকে বিশ্বের সব কিছুই দেখা হয়। সময় বের করে ঘরে বসে যাই দেখতে।

আমাদের সময়: অভিনয়ের বাইরে কোন সময়ে আপনি এখনও আটকে যান?

রুনা খান: আমার দাদুর বাড়ি, নানুর বাড়ি এমনকি আমার জন্মও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। তবে আমার বাবার চাকরির সুবাদে বড় হয়েছি টাঙ্গাইলের সখিপুর থানায়। আমার ৩ বছর বয়স থেকে এসএসসি পর্যন্ত সেখানে কেটেছে। তারপর পাশ করে আমি ঢাকায় আসি ১৯৯৮ সালে। তো আমার যে স্কুল জীবনের সময়টা, বিশেষ করে সখিপুর গার্লস হাইস্কুলের সময়টাতে আমরা একসাথে ৫টা বন্ধু খুবই ক্লোজ ছিলাম। যদিও আরও অনেক বন্ধু ছিল। আমাদের সখিপুরে তখন দুটো সিনেমা হল। হাইস্কুলের সময়টা হচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। সে সময়ে যখন কোনো সিনেমা হলে নতুন সিনেমা আসতো তখন সব বন্ধুরা মিলে তা দেখতে যেতাম। আর টেলিভিশনের সাপ্তাহিক ধারাবাহিক নাটক সে সময়ে আমাদের জন্য সব চেয়ে বড় বিনোদনের মাধ্যম ছিল। কারণ তখন মাত্র বিটিভি চ্যানেল ছিল। শুক্রবার আসলে তো টেলিভিশনে সিনেমা দেখাবে। এটার জন্য আরও অনেক আনন্দ নিয়ে বলা চলে মুখিয়ে থাকতাম। এই যে সময়টা স্কুল জীবনের, এটা আমার জীবনের সুন্দর একটা সময়। একেবারে নির্ভার, উচ্ছ্বল স্বর্ণালী সময়ে অংশ। বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে বিকেলে খেলতে যাওয়া। খুব দারুণ একটা সময় পেয়েছি আমরা। ওই সময়টাকে আমি খুব খুব মিস করি। সে সময় তো আর কখনও ফিরে যাওয়া সম্ভব না। বেড়ে ওঠার এই স্মৃতিগুলোতে এখনও বিভোর হয়ে থাকি। মনে হয় ইশ যদি আবারও ফিরে যেতে পারতাম।