সাংবিধানিক আদেশের বৈধতায় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটের পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
সাংবিধানিক আদেশের বৈধতায় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটের পরামর্শ

জাতীয় সংসদ কার্যকর না থাকায় সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের নির্ধারিত বিশেষজ্ঞরা। সেই সাংবিধানিক আদেশের আইনি বৈধতা দিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে বিএনপিসহ একাধিক দল। এ ছাড়া গণভোটের দাবিতে সরব থাকা জামায়াত চাইছে সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট।

গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। পরবর্তী বৈঠকের সময় জানানো হয়নি।

বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তৃতীয় দফায় বর্ধিত সময়ের আগেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতে চায় কমিশন। এর জন্য কোনো অবস্থাতেই এক মাস লাগবে বলে মনে করি না। আশা করি, দ্রুত একটি পরিণতি দেখা যাবে।

আলী রীয়াজ জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিন সনদের বিষয়ে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চূড়ান্ত খসড়া পাঠিয়েছে কমিশন। তারা ছয়টি উপায়ের পরামর্শ দিয়েছেন।

আলী রীয়াজ বলেন, সনদে স্বাক্ষর করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দুজন করে প্রতিনিধির নাম পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। বেশির ভাগ দলই পাঠিয়েছে। আমরা চাই, এ বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে।

বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশের বিষয়ে আইনজ্ঞদের পরামর্শ উপস্থাপন করা হয়। জানানো হয়, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ দফা অনুসরণ করে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে জুলাই সনদের সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো কার্যকর করা যায় এবং এই ‘সংবিধান আদেশ’ একটি গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করতে পারে।

এ নিয়ে আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা হলেও সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল ভিন্নমত পোষণ করেন। এর মধ্যে সাংবিধানিক সংস্কারে সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুযায়ী আদালতের পরামর্শ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি।

বৈঠকশেষে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত পরামর্শ বা অভিমত পাওয়া গেছে। তাদের সুপারিশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও পাঠানো হয়েছে। বিভিন্নভাবে অনেকে এটা সমর্থন করেছেন, অনেকেই এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। আশা করি সমাধানে পৌঁছাতে পারব।

আলী রীয়াজ বলেন, পূর্বে প্রস্তাবিত দুটি বিকল্প, ‘গণভোট’ এবং ‘সংবিধান আদেশ’। এ পর্যায়ে সমন্বিত সুপারিশে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ দফা অনুসরণ করে একটি ‘সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে জুলাই সনদের সংবিধান সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো কার্যকর করা যায় এবং এই ‘সংবিধান আদেশ’ একটি গণভোটের মাধ্যমে জনগণের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করতে পারে। প্রস্তাবিত গণভোট আয়োজনের বিষয়টি বর্ণিত সংবিধান আদেশে উল্লিখিত থাকবে এবং গণভোট আয়োজিত হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় হিসেবে কমিশন সরকারের কাছে যেসব সুপারিশ পেশ করবে, তার মধ্যে এটি হতে পারে অন্যতম।

আলী রীয়াজ বলেন, সনদের বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে সুপ্রিমকোর্টের কাছে পরামর্শ চাওয়ার বিষয়েও মতামত দিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তবে ভিন্নমতও রয়েছে। এ সময় জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটি ন্যূনতম সমঝোতায় উপনীত হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বৈঠকশেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা আলোচনার টেবিলে আছি। সমাধানের জন্য, এক জায়গায় যাওয়ার জন্য প্রতিদিন ইনোভেটিভ আইডিয়া বা জাতির পক্ষে সমাধানের জন্য প্রস্তাব দিয়ে যাচ্ছি। এখন যদি এই আলোচনার টেবিলে সমাধান হয়, তাহলে অসাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে আমরা বন্ধ করতে পারব।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জুলাই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়। তিনি বলেন, যদি সরকার জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি করে, তাহলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বিশেষজ্ঞদের মতামতে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের কথা বলা হচ্ছে। বলা হয়েছে, জুলাই ঘোষণার ২২ নম্বর ধারা অনুযায়ী এটি করা হবে। অথচ ২৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী এটি স্ববিরোধিতা। আবার গণভোটের কথা বলা হচ্ছে। আমরা মনে করি বিদ্যমান সরকার যেভাবে ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষমতায় আছে, সে রকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় কিনা দেখতে হবে। এরপর একটি অধ্যাদেশ হতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে আমরা সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত চাই না। আমরা গণপরিষদ নির্বাচন চাই।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, গণভোটের বিষয়টি সংবিধানে নেই। এটি নির্বাচিত সংসদ করবে। তিনি বলেন, আমরা সনদ বাস্তবায়ন চাই। তবে সুরক্ষার জন্য এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন কেউ চ্যালেঞ্জ না জানাতে পারে।