বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর আসলে করণীয়
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু! উপায় নেই, ভিজে গেলেন। এতেই কি শেষ? বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়ছে অথচ হাঁচি-কাশি হয়নি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বৃষ্টিতে না ভিজেও অনেকেই মেঘলা দিনে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে ইনফ্লুয়েঞ্জাতে ভুগে থাকেন। সাধারণত বৃষ্টিতে ভিজলে বুকে ঠাণ্ডা লেগে সর্দি-কাশির সৃষ্টি হয়।
আবার কারও কারও শরীরে জ্বরও আসতে পারে। বৃষ্টির পানিতে ভিজলে জ্বরে আক্রান্ত হন অনেকেই। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা থাকেন ঝুঁকিতে। তবে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলেই কমে যাবে আতঙ্ক।
বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ভাইরাসজনিত জ্বর। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় বৃষ্টিতে ভিজলেই জ্বরে ভুগতে হয়। সঙ্গে থাকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, লেপ্টোস্পাইরোসিস সংক্রমণ, টাইফয়েড ও নানা রকম শ্বাসনালিসংক্রান্ত রোগ বেড়ে যায়। বৃষ্টির পানিতে ডোবা জায়গা মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি করে, যা ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায়।
ভাইরাসজনিত জ্বরের সাধারণ উপসর্গ হলো হঠাৎ উচ্চমাত্রার তাপমাত্রা, মাথা ব্যথা, শরীর-ব্যথা ও চোখ থেকে পানি পড়া। বেশির ভাগ ভাইরাস জ্বর ৫-৬ দিনের মধ্যে নিজে থেকেই কমে আসে। তবে ৩-৪ দিনের মধ্যে যদি জ্বর না কমে বা নতুন কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, অবশ্যই পরীক্ষা করাতে হবে।
আসুন জেনে নিই বৃষ্টির পর হঠাৎ জ্বর এলে কী করবেন:
ঘরে ফিরেই পরিষ্কার হোন : বৃষ্টিতে ভিজে বাসায় ফিরলে গরম পানি দিয়ে হাত-পা ও মুখ ধুয়ে নিন। ভেজা কাপড় খুলে শুকনা ও পরিষ্কার কাপড় পরুন।
পুষ্টিকর খাবার ও পর্যাপ্ত পানি খান : জ্বর বা সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে প্রচুর পানি, ফলের রস ও হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খান।
তিন দিনের বেশি জ্বর মানেই সতর্কতা : ভেবেছেন ভাইরাস জ্বর, তাই অপেক্ষা করছেন? যদি জ্বর ৩-৪ দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা সঙ্গে নতুন উপসর্গ দেখা দেয়, অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করান।
ছোটদের ব্যাপারে বাড়তি সতর্কতা : পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের জ্বর হলে খিঁচুনির ঝুঁকি থাকে। তাই দ্রুত ঠান্ডা স্পঞ্জিং ও প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
আগে থেকেই সচেতন হোন
- আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন
- মশারি ব্যবহার করুন
- বিশুদ্ধ পানি ও পরিচ্ছন্ন খাবার খান
আরও পড়ুন:
চোখের রক্তবর্ণ ধারণের কারণ ও প্রতিকার
- অযথা বৃষ্টিতে ভেজা এড়িয়ে চলুন
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- জ্বর ৪-৫ দিনের বেশি থাকলে
- চোখ বা নাক দিয়ে রক্ত বের হলে
- বমি বা ডায়রিয়া হলে
- খুব বেশি দুর্বলতা বা খিঁচুনি দেখা দিলে
আরও পড়ুন:
শীতে গর্ভবতী মায়েদের যত্ন
- শিশুরা খাওয়া বন্ধ করলে বা খুব নিস্তেজ হয়ে পড়লে
মনে রাখবেন, সময়মতো চিকিৎসা না করলে সাধারণ ভাইরাস জ্বর থেকেও বড় বিপদ হতে পারে।
বর্ষা উপভোগ করুন, কিন্তু সতর্কও থাকুন। বৃষ্টির দিনে একটু মজা তো করতেই পারেন; কিন্তু তার জন্য নিজের শরীরের যত্ন নেওয়াও জরুরি। কারণ, একটু অসাবধানতাই জ্বর, ডেঙ্গু, টাইফয়েডের মতো রোগ ডেকে আনতে পারে। তাই আগে থেকেই সচেতন থাকুন, যাতে বৃষ্টির রোমান্সে ভেজার আনন্দ ম্লান না হয়ে যায়।