ভাঙ্গায় ভাঙচুর, ‘ফ্যাসিস্ট’ খুঁজছেন ডিআইজি
ফরিদপুরে ভাঙ্গা সীমানা পুনর্বিন্যাস নিয়ে ষষ্ঠ দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ হয়। গতকাল সকালে ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়। তবে পরে সাড়ে ৯টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা মহাসড়ক থেকে সরে যান আন্দোলনকারীরা। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এরই মধ্যে সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি পাঠিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা। এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে ক্ষতিগ্রস্ত অফিসগুলো পরিদর্শন শেষে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক ‘ফ্যাসিস্ট’ খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দেন।
নৈরাজ্যের প্রতিবাদে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়। এতে জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতারা অংশ নেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদারেস আলী ঈসা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের লোকজন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অনুপ্রবেশ
করে নৈরাজ্য ঘটিয়েছে। এর জন্য তিনি নিক্সন চৌধুরীকে দায়ী করেন। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে নিক্সন চৌধুরী একটি বক্তব্য ভাইরাল হওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করেন এই নেতা। দুপুরে ভাঙ্গা ঈদগাহ মাঠে সর্বদলীয় সমাবেশ থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হোসেন সেলিম ঘোষণা দেন- ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত থাকবে।
এদিকে, আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়- ফরিদপুর-২ এবং ফরিদপুর ৪-এর সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই তালিকায় ফরিদপুর ৪-এর অন্তর্গত দুটি ইউনিয়ন (আলগী ও হামিরদী) ফরিদপুর ২-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা উপজেলার সাধারণ জনগণ ওই আসনবিন্যাস বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর বিক্ষোভকারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিসারের কার্যালয়, ভাঙ্গা থানা, হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয় ও সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাখে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে।
ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক গত সোমবার দিবাগত রাতে ক্ষতিগ্রস্ত অফিসগুলো ঘুরে দেখেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা ফ্যাসিস্ট, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিদর্শন শেষে ভাঙ্গা উপজেলার অফিসারদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠক করেন।
এ সময় ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি সিদ্দিকুর রহমান, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা, জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিন্টু বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) আসিফ ইকবাল, ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ফরিদপুরের ডিসি কামরুল হাসান মোল্লা জানান, মানুষের আবেগ ও দাবি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ২১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে রিটের শুনানি আছে। এরপর সিদ্ধান্ত জানা যাবে। তিনি জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভাঙ্গার সুনাম রক্ষায় কর্মসূচি থেকে সরে আসুন। জনগণের কষ্ট যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।