চীনা ঋণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে সরকার

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
চীনা ঋণে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে সরকার

তিস্তা নদীকে ঘিরে বহু প্রতীক্ষিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নতুন গতি এসেছে। প্রকল্পটির জন্য চীনের কাছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ, বেইজিংও এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়ামকে বেইজিংয়ের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শুধু তিস্তা নয়, চীনের অর্থায়নে হাসপাতাল নির্মাণ ও বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগ (জিজিআই) নিয়ে আলোচনাও হয়।

তিস্তা নদীর দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ‘কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন অব তিস্তা রিভার প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নে চীন থেকে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রকল্পের প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫ কোটি ডলার। বাকি ২০ কোটি ডলার আসবে সরকারি অর্থায়ন থেকে। ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০২৯ সালে শেষ হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের শেষ দিকে তিস্তা প্রকল্প যাচাইয়ে বাংলাদেশে আসছে চীনের একটি কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল। ইতোমধ্যেই পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছে। ইআরডি গত জুলাইয়ে চীনা দূতাবাসে ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে।

বৈঠকে চীনা রাষ্ট্রদূত জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৮০ কোটি ডলারের বেশি বেড়েছে, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এ ছাড়া বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের পর গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি, হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প ও বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

তিস্তা প্রকল্প নিয়ে অতীতে চীন ও ভারত উভয়েরই আগ্রহ ছিল। ২০২৪ সালের মে মাসে ঢাকা সফরে এসে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়েত্রা প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তিনি চান প্রকল্পটি ভারত করুক। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের সম্পৃক্ততা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কৌশলগত দিক থেকে তিস্তা প্রকল্পে চীনের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিস্তা ও অন্যান্য কয়েকটি নদীর উৎপত্তি চীনে, যেখানে একাধিক বাঁধ নির্মিত হয়েছে। ফলে চীনের অংশগ্রহণ থাকলে ভবিষ্যতে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আলোচনা করার সুযোগ তৈরি হবে।