ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র গড়তে শেখ হাসিনা নানা পদক্ষেপ নেন
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ বছর একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেগুলো বাস্তবায়ন করেছিলেন। গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তিনি সাক্ষ্য দেন। মামলায় আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজন।
মাহমুদুর রহমান জানান, বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তৎকালীন সরকারপ্রধান, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ কোনো ব্যবস্থা নেননি; বরং দুদিন ধরে এ হত্যাকা- ঘটতে দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনার সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা ছিল। পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার পরিকল্পনায় তিনি সফল হন। তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণের পর শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে কব্জায় নেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আদালতকে ব্যবহার করা হয়। খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল- সবই আদালতকে ব্যবহার করে করা হয়। অনুগত বিচারপতিদের পুরস্কৃত করা হয়। এতে গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগ দখলের পর হাসিনা প্রতিপক্ষ দমনে মনোযোগ দেন জানিয়ে জবানবন্দিতে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, ইসলামি দলগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের নামে ‘মব কালচার’ সৃষ্টি করা হয়। এর জবাবে হেফাজতে ইসলামের উত্থান ঘটে। ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা চালানো হয়। আজও সেই হত্যার বিচার হয়নি।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার চলাকালে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই বিচারপতি বিচারের নামে অবিচার করেছিলেন। তিনি তার বেঞ্চের মামলা নিয়ে বিদেশে থাকা জিয়া উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করতেন। স্কাইপ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। পুুরো বিচার প্রক্রিয়া একটি তামাশায় পরিণত হয়। পরে স্কাইপ কেলেঙ্কারির সংবাদ প্রকাশ করায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ও ৫৮ ধারায় আমার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করা হয় এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে, আজ মঙ্গলবার এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাক্ষ্য দেবেন। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ৪৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আরও দুজন সাক্ষ্য দিলে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। তিনি স্বীকার করেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে গত বছর গণহত্যা হয়েছে। এ জন্য তিনি ক্ষমাও চান। গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।