ভুল চিকিৎসার অভিযোগ /
শিশু জান্নাতুল এখন আর কথা বলে না
বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভুল চিকিৎসায় তিন বছরের জান্নাতুল ফেরদৌস এখন আর কথা বলতে পারে না। ঘটনা শুরু গত ২১ মার্চ খেলনা ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে। জান্নাতের জিহ্বা কেটে যায়। শিশুটির পরিবার দ্রুত তাকে শেবাচিমে নিয়ে যায়। কিন্তু দেরিতে এবং ভুল চিকিৎসার কারণে সে আর কথা বলতে পারছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারটির। এদিকে মেয়ের দুর্ঘটনার খবর শুনে প্রবাস থেকে ছুটে এসেছিলেন বাবা মোহাম্মদ নান্নু মিয়া। সন্তানের এমন অবস্থা দেখে ভেঙে পড়েছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার আদরের প্রথম সন্তান আর বাবা বলে ডাকে না। কথা বলতে পারছে না। এই কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছি না।’
বরিশালের উজিরপুর থানাধীন ওটরা গ্রামে থাকে শিশু জান্নাতুল ফেরদৌসের পরিবার। ঘটনার পর পরই শিশুটির পরিবার দ্রুত শেবাচিমে নিয়ে যায়। ডাক্তার প্রথমে রাতেই সেলাই করার কথা বলেন। কিন্তু সময় গড়িয়ে সকাল হয়ে যায়। পরে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. দীপংকর কুমার সাহার তত্ত্বাবধায়নে অ্যানেস্থেশিয়া দিয়ে অজ্ঞান করে জিহ্বা সেলাই করা হয়। এর পরই জান্নাতের খিচুনি শুরু হয়। জ্ঞানও ফিরতে দেরি হয়। এখন যদিওবা জ্ঞান আছে, কিন্তু শিশুটি আর কথা বলতে পারে না। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে। ওজনও কমে গেছে।
নান্নু মিয়ার অভিযোগ, ডাক্তাররা গুরুত্ব দেননি মাথার আঘাতে। পরে ঢাকায় পরীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রেনে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছিল। বরিশালে তা খেয়াল না করে শুধু জিহ্বা সেলাই করা হয়। পরিস্থিতি খারাপ হলে ডাক্তাররা শিশুটিকে ঢাকায় নিতে বলেন। অথচ সমস্যার কথা উল্লেখ না করে ছাড়পত্রের সঙ্গে প্রেসক্রিপশনে লেখা সমস্যাগুলো কেটে দেয়। ঢাকায় আনার আগ পর্যন্ত হাসপাতালে বড়দের পিআইসিইউতে রাখা হয়। তিনি আরও বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মেয়ে আজ জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। আমি গত ২৩ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু হাসপাতাল কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসার জন্য ক্ষতিপূরণ ও উন্নত চিকিৎসার জন্য সহায়তা চেয়েছি।
ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে, ঢাকায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অনেক খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে তারা। মেয়ের ওজন কমে মাত্র সাড়ে ৬ কেজি হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া দারকার, কিন্তু এর ব্যয়ভার বহন করা অসম্ভব। নান্নু মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়ে চোখের সামনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুই করতে পারছি না। আমি এর বিচার চাই।’
ডা. দীপংকর কুমার সাহা বলেন, সার্জারিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। এটা অ্যানেস্থেশিয়ার সমস্যা হতে পারে। রাতে ভালো অ্যানেস্থেশিয়ার ডাক্তার ছিল না, তাই সকালে করা হয়েছে। ডা. তৌফিক বলেন, আমি রোগীকে শুধু পিআইসিইউতে পাই। অপারেশনের বিষয়ে আমি জানি না। ভুল চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত নই। শেবাচিমের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর বলেন, এমন অভিযোগ মনে পড়ছে না। খতিয়ে দেখব।