বিপদসীমার উপরে তিস্তার পানি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বিপদসীমার উপরে তিস্তার পানি


উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ডালিয়া পয়েন্টে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপরে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি আরও বাড়বে। এতে লালমনিরহাটসহ রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

পানি বাড়ার কারণে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে পাটগ্রামের গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোঁচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর, বড়বাড়ী ও গোকুন্ডা ইউনিয়নে নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

গত আগস্ট মাসে তিন দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিস্তাপারের কৃষকরা। তলিয়ে গেছে তাদের বোনা আমন ধান। পরে আবার তারা জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন। তবে নতুন করে পানি বাড়লে সেই ফসলও ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে কৃষক পরিবারগুলোর মধ্যে।

হাতীবান্ধার সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে জরুরি ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন।

তিস্তা ব্যারাজ কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ নুরুল ইসলাম জানান, সোমবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীতীরবর্তী মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি দ্রুত বাড়ছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে- এ জন্য নদীপারের মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছি।

গঙ্গাচড়ায় বন্যা আতঙ্ক

এদিকে গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নদীপারের মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কিছু জায়গায় ইতোমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

নোহালী ইউনিয়নের চর বাগডহরার বাসিন্দা মোনায়েম বলেন, পানি বৃদ্ধির পর থেকে আমাদের এখানে স্বেচ্ছাশ্রমে যে বাঁধটি করা হয়েছে তাতে ফাটল দেখা দিয়েছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে কয়েকশ একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাবে।

উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তায় আবার পানি বাড়ছে। এতে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (বাপাউবো) জানিয়েছে, আগামী তিন দিনে (১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর) রংপুর বিভাগের প্রধান নদী- তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। এর মধ্যে তিস্তা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই নদীপারের মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৫ মিলিমিটার।