নুরাল পাগলার মরদেহে পেট্রোল ছিটানো সেই যুবক কারাগারে
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নজরুল ইসলাম নজির (৩৩) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নাসের মাতুব্বরপাড়ার বাসিন্দা।
আজ রবিবার ভোরে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থেকে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। পরে বিকেলে আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৭ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত সোমবার রাতে নুরুল হকের ভক্ত নিহত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, ক্ষতিসাধন, চুরি ও জখমের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার জনকে আসামি করে গোয়ালন্দ থানায় মামলা দায়ের করেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন অজ্ঞাত সাড়ে তিন হাজার জনের বিরুদ্ধে।
রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ শরীফ আল রাজীব বলেন, ‘নিহত রাসেলের হত্যা মামলায় নজরুল ইসলাম নজিরকে গ্রেপ্তার হয়েছে। এরমধ্যে অপু, বিল্লু ও সোহান সরদার, অভি মণ্ডল রঞ্জু ও মাওলানা আব্দুল লতিফ, মাওলানা আবু সাঈদ, মো. রাসেল শেখ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৌহিদি জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলার দরবার শরীফে। পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে নুরাল পাগলের দরবার শরীফে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। নিহত হয় নুরাল পাগলের ভক্ত রাসেল মোল্যা।
স্থানীয়রা বলেন, ২৩ আগস্ট মারা যান নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। এরপর তার ভক্তরা দরবারের ভেতরে তাকে কবর দেন এবং কবরের উপরের ১০-১২ উঁচু একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয় যা সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফে মতো দেখতে। তাই এ নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিলেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তারা দরবারে হামলা চালান এবং দরবারের ভেতরে থাকা নুরাল পাগলের কবর ভেঙে দেন। সেই সঙ্গে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে তা পুড়িয়েও দেন।