আম্মুর পছন্দের ফাহিম এখন জাকসুর জিএস: জুলাইযোদ্ধা ফাইয়াজ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫২
শেয়ার :
আম্মুর পছন্দের ফাহিম এখন জাকসুর জিএস: জুলাইযোদ্ধা ফাইয়াজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের (জাকসু) জেনারেল সেক্রেটারি (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির মাজহারুল ইসলাম ফাহিম। নির্বাচনে শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট থেকে জিএস নির্বাচিত ফাহিমের ব্যাপক অবদান ছিল জুলাই আন্দোলনে। ফাহিমের অবস্থান শনাক্ত করতেই তার ছোট ভাই হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

১৭ বছর বয়সী কিশোর ফাইয়াজকে আটকের ৩ দিন পর ফাইয়াজকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গায়ে বাংলাদেশের জার্সি পরিহিত কিশোরের হাতে লাগানো হাতকড়াসহ মোটা রশি লাগিয়ে আদালতে নেওয়ার দৃশ্য পুরো বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। তার এ ঘটনায় জাতিসংঘও বিবৃতি দিয়েছিল। সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠে এই কিশোর। তারই আপন বড় ভাই ফাহিম এখন জাকসুর জিএস।

মাজহারুল ইসলাম ফাহিম লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর আলেকজান্ডার এলাকার বাসিন্দা এবং ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম মঞ্জুর বড় ছেলে।

আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘মাজহারুল খুব ছোট বেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এবং ভদ্র স্বভাবের। ২০১৬ সালে সে নোয়াখালী জেলা স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি, ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। পড়ালেখার পাশাপাশি সে অনেক ধরেন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় মাজহারুলের অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তার সন্ধান জানতেই ২৪ জুলাই আমার ছোট ছেলেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। তিনদিন পর তাকে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ায় তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়। ১৭ বছর বয়সী ফাইয়াজকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে তোলে পুলিশ। আদালত তার রিমান্ড মঞ্জুর করে। এতে দেশবাসী তখন ফুঁসে উঠে। ফাইয়াজ কিশোর জুলাইযোদ্ধা হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি পায়। তার ইস্যুতে জাতিসংঘও বিবৃতি দিয়েছে।’

এদিকে গত ২১ আগস্ট ভাইয়ের জন্য ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে ফাইয়াজ লিখেছেন, ‘আমার আম্মুকে একদিন আমি জিজ্ঞেস করি—আম্মু, আপনার সবচেয়ে প্রিয় ও পছন্দের মানুষ কে? আম্মু কোনো কিছু চিন্তা না করেই উত্তর দিয়ে বলে, ফাহিম। আম্মুর সবচেয়ে পছন্দের মানুষ মাজহারুল ইসলাম ফাহিম এবার জাকসু নির্বাচনে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট-এর প্যানেলে জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় আপোসহীন ভূমিকা, মতামতের বৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জায়গায় ভাইয়া অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবেন বলে বিশ্বাস করি।’

ফাইয়াজ আরও লিখেছেন, ‘জুলাই বিপ্লবে ভাইয়া জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। আমাকে টর্চার করে ভাইয়ার লোকেশন জানতে চেয়েছিল সেই মূহুর্তে, আমার থেকে লোকেশন নিতে না পেরে তারা ভাইয়ার মোবাইল নাম্বার ট্র্যাকিং করেছিলো। কিন্তু ভাইয়াকে ধরতে পারে নাই কৌশল অবলম্বনের কারণে।’

এদিকে জাকসুর নব নির্বাচিত জিএস মাজহারুল ইসলাম ফাহিম বলেন, ‘যেদিন শিক্ষার্থীরা আমাদের স্বীকৃতি দেবে যে, আমরা আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পেরেছি, এই ক্যাম্পাসের হাজার হাজার শিক্ষার্থী যারা আমোদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, তাদের আমানতের ভার আমরা রক্ষা করতে পেরেছি, সেই দিন আমরা বলতে পারবো আমরা বিজয় অর্জন করতে পেরেছি।’

প্রসঙ্গত গতকার শনিবার বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং কমিশনের সদস্যসচিব একেএম রশিদুল আলম আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট থেকে তিনি জিএস নির্বাচিত হন। ২৫টি পদের মধ্যে ২১টিতেই জয় পেয়েছে এ জোট।

জাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্যানেলের আব্দুর রশিদ জিতু। এজিএস (ছাত্র) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও এজিএস (ছাত্রী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা নির্বাচিত হয়েছেন। তারা দুজনই ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী।