১৯ কোম্পানি সময়মতো বিদ্যুৎ না দিলেও জরিমানা মওকুফ চায়

লুৎফর রহমান কাকন
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
১৯ কোম্পানি সময়মতো বিদ্যুৎ না দিলেও জরিমানা মওকুফ চায়

সরকারের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে না পারায় বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে চুক্তি অনুযায়ী জরিমানা (এলডি) দিতে হয়। এতে কয়েকশ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিককে। কিন্তু তারা জরিমানা দিতে রাজি নন। কোম্পানিগুলো জরিমানাহীন বিল পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) আবেদন করেছে।

এ ছাড়া, কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে আদেশ চেয়েছে যেন জরিমানার টাকা না কেটে পিডিবির কাছে পাওনা বকেয়া থাকা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা কোম্পানিগুলোকে পরিশোধ করে দেয়। গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে বিইআরসিতে শুনানিও হয়। তবে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো নানা সুবিধা চায়। তারা নিয়ম মানতে চায় না। জরিমানা ছাড়াই বিল আদায়ের চেষ্টা করছে। বিষয়টি এখনও শুনানির পর্যায়ে আছে। অক্টোবরে আবার শুনানি হবে। সূত্র জানায়, কমিশন আগের রায় বহাল রেখেছে। অর্থাৎ, আগামী অক্টোবর পর্যন্ত জরিমানা না কেটে বিল দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে। এদিকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সরকারের স্বার্থ রক্ষায় নতুন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। আগামী শুনানিতে পিডিবির নতুন আইনজীবী অংশ নেবেন।

চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ না দিলে বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে জরিমানা দিতে হয়। জরিমানার টাকা বকেয়া বিল থেকে কেটে নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর দাবি, পিডিবির কাছে তাদের বিপুল বকেয়া রয়েছে। সেই কারণে তারা সময়মতো জ্বালানি আমদানি করতে পারেনি। ফলে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয়নি।

আবেদনকারী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে কনফিডেন্স গ্রুপের চার প্রতিষ্ঠানÑ কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া লিমিটেড, কনফিডেন্স পাওয়ার বগুড়া লিমিটেড (ইউনিট-২), কনফিডেন্স পাওয়ার রংপুর লিমিটেড এবং জোডিয়াক পাওয়ার চিটাগং লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বকেয়া প্রায় ১ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। তবে জরিমানার অঙ্ক উল্লেখ করা হয়নি।

এ ছাড়া প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকীর কোম্পানি ডরিন গ্রুপের পাঁচ প্রতিষ্ঠানও আবেদন করেছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, ঢাকা নর্দান পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, বেনকো এনার্জি জেনারেশন, মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড ও চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বকেয়া ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মানিকগঞ্জ পাওয়ার জেনারেশনের জরিমানা ১৪৩ কোটি ৩৪ লাখ এবং চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশনের ৭৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

এ ছাড়া ওরিয়ন গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট, ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও ও ওরিয়ন পাওয়ার রূপসা লিমিটেড আবেদন করেছে। তারা ৬৩২ কোটি টাকা ছাড় চাইছে। তালিকায় আরও রয়েছে ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, ইভিপি চিটাগং লিমিটেড, কাঞ্চন পূর্বাচল পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড, ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং ইউনাইটেড পাওয়ার লিমিটেড। ইউনাইটেড পাওয়ারের জরিমানা ১৭ কোটি ৬৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আটকে রাখার কথা বলা হয়েছে।

এসব কোম্পানি প্রায় ১৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ খাতে ব্যবসা করছে। অনেকের চুক্তি শেষ হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় দফায় দফায় নবায়ন হয়েছে। ‘নো-ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ পদ্ধতিতেও নতুন চুক্তি হয়েছে, অর্থাৎ বিদ্যুৎ দিলে ভাড়া পাবে, না দিলে পাবে না। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, অনেক অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থেকেও ভাড়া পাচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান, পিডিবির তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থেকে চলেছে বেসরকারি ওই সব বিদ্যুৎকেন্দ্র।