আব্দুল্লাহপুরে ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ সেতু, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

টঙ্গী প্রতিনিধি
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৫
শেয়ার :
আব্দুল্লাহপুরে ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ সেতু, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

রাজধানীর উত্তরাসহ আশপাশের এলাকার যাতায়াতের ব্যবস্থার একমাত্র মাধ্যম ছিল তুরাগ নদের ওপর নির্মিত আরসিসি দুইটি টঙ্গী আব্দুল্লাহপুর সংযোগ সেতু।

বিআরটি প্রকল্পের কারণে সেতু দুটি ভেঙে ওপরে ফ্লাইওভার এবং নিচে দুইটি অস্থায়ী বেইলী ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ওই দুইটি বেইলি ব্রিজের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি বেইলি ব্রিজ ভেঙে গেছে। আর অপরটি রয়েছে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।

স্থানীয়দের দাবি, বিআরটি’এর ভুল ডিজাইনে নির্মিত সেতু এই এলাকার জনসাধারণের চলাচলে কোনো ভুমিকা রাখছে না। টঙ্গী বাজার থেকে ঢাকাগামী সেতুটি চালু হলেও উত্তরা আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরমুখী সংযোগ সেতু এখনো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। সেতুর উচ্চতা এতই বেশি, পায়ে চালিত রিক্সা, ভ্যান এবং সাধারণ জনগণের জন্য এই সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

স্থানীয় সাধারণ জনগণ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে ফ্লাইওভারের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ একটি বেইলি ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। অপর একটি জরাজীর্ণ ব্রিজ দিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ছোটখাটো যানবাহন। জনসাধারণের আশঙ্কা, যেকোনো সময় এই ব্রিজ ভেঙে ঘটতে পারে বড় ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

নতুন ব্রিজ নির্মাণে স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় মানববন্ধন বিক্ষোভ এমনকি মহাসড়ক অবরোধ করার মত কর্মসূচি পালন করলেও নতুন ব্রিজ নির্মাণে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এছাড়া সেতুর দুই পারের রাস্তায় ছোট বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা দিয়েই প্রতিনিয়ত ছোটখাটো যানবাহন, অটো, সিএনজি, প্রাইভেট কার চলাচল করছে।

টঙ্গীর তুরাগ নদের উপর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপরে ফ্লাইওভার নিচে বেইলি ব্রিজ দুইটির বিভিন্ন স্থানে মরিচা পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়েই অটো সিএনজি পিকআপ ভ্যান ও প্রাইভেট কারের মতো যানবাহন চলাচল করছে। বেইলি ব্রিজের প্রবেশ মুখে সড়ক ও জনপদ বিভাগের একটি নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া থাকলেও তা কেউ মানছেন না।

স্থানীয় এক পথচারী বলেন, ‘টঙ্গীর মাজার এলাকায় আমার বাড়ি। উত্তরা আব্দুল্লাহপুর মাছের আড়ত থেকে কাজ শেষে ঘরে ফেরার জন্য এই ভাঙ্গা ব্রিজই হচ্ছে একমাত্র মাধ্যম। যদি ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যেতে হয়, তাহলে প্রায় ২ কিলোমিটার অতিরিক্ত ঘুরতে হবে। এছাড়া উঁচু সেতু দিয়ে চলাচল খুব কষ্টদায়ক।’

একই কথা বলেন টঙ্গী বউবাজার এলাকার বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন সাজ্জাদ।

স্থানীয় টঙ্গী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের বৃহত্তর পাইকারি বাজারগুলোর মধ্যে টঙ্গী বাজার সবচেয়ে প্রাচীন। গাজীপুরবাসী ও রাজধানীর আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীদের একমাত্র নির্ভরযোগ্য হচ্ছে টঙ্গী বাজার। বাজারে আগত ক্রেতারা যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হিসেবে এই বেইলি ব্রিজ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বর্তমানে ব্রিজ দুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এই বাজার থেকে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতারা অন্য বাজারে চলে যাচ্ছেন। এর ফলে প্রাচীনতম এই পাইকারি বাজার মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।

এ বিষয়ে টঙ্গী বাজারের মার্কেট মালিক এবং টঙ্গী পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি সরকার জাবেদ আহমেদ সুমন বলেন, ‘টঙ্গী বাজারে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা পরিচালনা করেন। টঙ্গী বাজারের প্রায় অর্ধেক মার্কেট আমাদের পরিবারের মালিকানাধীন। সেই সুবাধে তুরাগ নদের ওপর নতুন ব্রিজ নির্মাণের জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যা ভেঙে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেতু নির্মাণের বিষয়ে সরকার কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে বেইলি ব্রিজের দুই পাশের রাস্তার মেরামত করার বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তারা রাস্তা পরিদর্শন করেছেন।’ 

এ সময় তিনি অতি দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান। 

তবে, এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ মেরামত ও নির্মাণ প্রসঙ্গে গাজীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং সেতু বিভাগের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।