স্ত্রীকে জোরপূর্বক এসিড খাইয়ে খুন, স্বামী আটক
বান্দরবানে ফোর এইচ গ্রুপ নামের রাবার বাগানের পাহারাদারের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে এসিড খাইয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে। এসিড পানে নিহত গৃহবধুর নাম জেসমিন আক্তার (২৩)। অভিযুক্ত স্বামী মোহাম্মদ তোহা প্রকাশ পেটান। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে।
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার সূত্রপাত হয় গত মঙ্গবার দুপুরে, এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের নারিচ বুনিয়া আলীমিয়া পাড়ার বাসিন্দা।
নিহত জেসমিনের পরিবার জানায়, নিহত জেসমিন আক্তারের স্বামী পেঠান ডিভাইন তথা ফোর এইচ গ্রুপে শ্রমিক ও নৈশপ্রহরী ছিলেন। তার স্বামী মো. তোহা প্রকাশ পেটান মাদক গ্রহন করতেন। ঘটনার দিন মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর নেশার টাকার দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে বলেন। কারণ তখন স্ত্রীর কাছে একটি এনজিও’র কিস্তির জন্যে রাখা আড়াই হাজার টাকা জমা ছিল। স্বামী বারবার এ টাকা দিতে বলেন। স্ত্রী জেসমিন রাজি না হওয়ায় প্রথমে মারধর করেন তিনি। পরে আহত স্ত্রীকে জোর করে মুখে এসিড ঢেলে দেন পাষন্ড স্বামী।
সূত্র মতে, এসিড খাইয়ে দেওয়ায় জেসমিনের অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে ঘটনাস্থলে পানিতে চুবানো হয়। এরপর তাকে মলমুত্র পান করানো হয়। তাতেও সুস্থ না হওয়ায় জেসমিনকে বাইশারী বাজারের পল্লী চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে ৪ দিন পর স্ত্রী জেসমিন মারা যান।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মো. নজরুল ইসলাম নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ইতোমধ্যে আসামি মুহাম্মদ তোহা প্রকাশ ওরফে পেটানকে আটক করেছে।
জেসমিনে কলেজ পড়ুয়া বোন মোমেনা আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে জানান, তার বোনের সংসারে ২টি ফুটফুটে সন্তান রয়েছে। মাত্র ৭ দিন আগে তার বোনকে সেখানে নিয়ে যায় তার দুলাভাই পেঠান। সেখানেই তাকে জোর করে এসিড পান করিয়ে মারে সেই ঘাতক দুলাভাই। হয়তো তার বোনকে হত্যা করতেই সেখানে কৌশলে নেয়া হয়েছিল।
এদিকে ফোর এইজ গ্রুপ তথা ডিভাইন গ্রুপের স্থানীয় অফিসে গেলে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাই কথা বলতে রাজি হননি। তবে তারা স্বামী কর্তৃক এসিড পান করিয়ে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
বাগানের পাহারা ঘরে এসিড রাখা ও মাদকাসক্ত যুবকের হাতে এসিড রাখার বৈধতা বা তাকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রুপের অফিস সহকারী আবদুল্লাহ আল হোসাইন কোনো উত্তর দিতে পারেননি। গ্রুপের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা মালিকের ফোন নস্বরও দিতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাশরুরুল হক জানান, গৃহবধূকে জোরপূর্বক এসিড খাওয়ানোর অভিযোগে স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।