বিমানে তিন এমডি নিয়োগের পরিকল্পনা
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং হাতছাড়ার শঙ্কা ।। ক্ষুব্ধ বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাজে গতি আনতে তিনটি বিভাগকে পৃথক করে তিনজন এমডি নিয়োগের কথা ভাবছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এতে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া তারা থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করতে চান না। তাদের চাওয়া, অন্য কোনো অপারেটরকে যুক্ত না করে সেবার মান বাড়িয়ে কর্মপরিকল্পনা করে অগ্রসর হওয়া। এর বিপরীত সিদ্ধান্ত হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার রাতে বলাকায় বিমান উপদেষ্টা ও বিমানের চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন জরুরি সভা করেন বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে। সভায় তিনি থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য অন্য অপারেটর যুক্ত করার কথা বলেন। বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেখানে তাদের অভিমত তুলে ধরেন। তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও বলেন, দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে বিমান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে আসছে। থার্ড টার্মিনালে সেবা দেওয়ার জন্য বিমানের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী বিমান সেবা দিতে ব্যর্থ হলে অন্য অপারেটর নিয়োগ দেওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমান উপদেষ্টা বিমানের দায়িত্ব পাওয়া ও চেয়ারম্যান হওয়ার পর থার্ড টার্মিনালে অন্য অপারেটর যুক্ত করার কথা বলছেন, যা অন্যায়। এরই মধ্যে বিমান প্রচুর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি কিনেছে, লোকবল নিয়োগ দিচ্ছে। এ অবস্থায় অন্য কাউকে যুক্ত করা হলে বিমান তা মেনে নেবে না। দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে। এমন হলে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বিমানবন্দরগুলোতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার একচেটিয়া অধিকার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের। সে জন্য সেবার মান উন্নত হয় না। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে বিমানের সেবার মান নিয়ে বহু বছর ধরে যাত্রী ও এয়ারলাইনসগুলোর অভিযোগ রয়েছে। দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি না থাকায় এবং অব্যবস্থাপনায় সময়মতো যাত্রীদের ব্যাগেজ না-পাওয়ার অভিযোগ হরহামেশা পাওয়া যাচ্ছে। তাই থার্ড টার্মিনালের সেবা শুধু বিমানের হাতে না দিয়ে অন্যান্য
এয়ারলাইনস বা বেসরকারি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানিকেও এই সেবা প্রদানের সুযোগ দেওয়া উচিত। এতে সেবার মান বাড়বে, প্রতিযোগিতা বাড়বে, যাত্রী ও এয়ারলাইনসগুলো আরও ভালো পরিষেবা পাবে, যা বিমানবন্দর উন্নয়নে সহায়ক হবে।
এ ছাড়া দুই বছরের জন্য থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিমানকে দেওয়ায় জাপানি কনসোর্টিয়াম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিল। এ জন্য থার্ড টার্মিনালের অপারেশনের জন্য চুক্তি করতে কালক্ষেপণ করছে তারা। জাপানি কনসোর্টিয়াম এসব বিষয় প্রতিনিধির মাধ্যমে আনঅফিসিয়ালি জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার বিমানের পাশাপাশি দ্বিতীয় আরেকটি কোম্পানিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি একটি সূত্রের। এ বিষয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমর্থন নিতেই সভা আহ্বান করা হয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বিমানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা সভায় উপস্থিত ছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, সভায় উপদেষ্টা বলেছেন- থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমানের পাশাপাশি অন্য একজন অপারেটর নিয়োগ দিতে চাই, যাতে প্রতিযোগিতা হয়। এ ছাড়া অব্যবস্থাপনা, সোনা চোরাচালান ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন। এর পর তিনি সবার কাছ থেকে প্রশ্ন আহ্বান করেন।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, উপদেষ্টা বলেছেন- গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ে দ্বিতীয় একজনকে যুক্ত করে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষিত করতে চান। এখানে আয়াটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দিতে চান। তবে ওনার মেয়াদ আছে ৪ মাস। অন্য হ্যান্ডলারকে যুক্ত করা হলে তারা যেসব যন্ত্রপাতি আনবে তা রাখবে কোথায়, জায়গাই তো নেই। আমরা বলেছি- উড়োজাহাজ কেনেন, রুট বাড়ান, লোকজন নিয়োগ দেন। প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হলে নেব।
বিমান জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক স ম জাহাঙ্গীর কবির জন আমাদের সময়কে বলেন, সভায় উপদেষ্টাকে বলেছি- গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবায় অন্য কাউকে যুক্ত করার বিষয়ে আমাদের দ্বিমত আছে। এটা করলে আমরা আন্দোলনে যাব। বিমান কেনেন, কিন্তু অন্য অপারেটর দিতে পারবেন না। সেলস ডিপার্টমেন্টে দুর্নীতি ও সোনা চোরাচালান বন্ধ এবং যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এক সঙ্গে কাজ করতে পারি। ৩ জন এমডি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা কিছুই বলেননি। তিনি বলেছেন, আপনাদের সঙ্গে আবার বসব।