নির্বাচন কমিশন থেকে ৪ শিক্ষকের পদত্যাগ

আলী হাসান মর্তুজা, জাবি
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
নির্বাচন কমিশন থেকে ৪ শিক্ষকের পদত্যাগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৩০ ঘণ্টা পরও ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে (হাতে) ভোট গণনার ফলে দীর্ঘ সময় লাগছে। এদিকে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেছেন চার শিক্ষক।

অন্যদিকে প্রার্থীরা বলছেন, ফল প্রকাশে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। ফলাফল নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা তৈরি করা হলে প্রতিরোধের হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া শিক্ষকরা ফলাফল বানচালের ইন্ধন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম।   

গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর রাত ১০টায় শুরু হয় হল সংসদের ভোট গণনা। তবে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বন্ধ থাকে ভোট গণনা। ভোটগ্রহণের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হয়। এরপর গতকাল বিকাল ৫টা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) ভোট গণনা শুরু করে প্রশাসন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব একেএম রাশিদুল আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে যেসব কারণে ভোট গণনায় দেরি হয়েছিল, সেগুলো আমরা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আমরা আশা করছি রাতের মধ্যে (শুক্রবার) ফলাফল দিতে পারব। 

এদিকে শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন প্রীতিলতা হলের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক সুলতানা আক্তার। এ সময় তিনি ভোট গণনায় বাধা দেন ও অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) পদ্ধতিতে ভোট গণনার দাবি তোলেন। তিনি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার মাধ্যমে কারচুপি রোধ করে ভোটগ্রহণ করেছি। ১ শতাংশও কারচুপি হয়নি। কথা ছিল মেশিনে ভোট গণনা করার। কিন্তু সেটি না করে হাতে গোনা হচ্ছে। শিক্ষকদের অমানবিক পরিশ্রম হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আরও কয়েক দিন লাগবে। হাতে ভোট গুনতে আগ্রহ দেখেই আমরা বুঝেছি, ভোট গণনার নামে কালক্ষেপণ করা হয়েছে। এভাবে চলে না। ইতোমধ্যেই একজন সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যুর জন্য প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন দায়ী। তার দাবির প্রেক্ষিতে ২ ঘণ্টা আলোচনা হয়, তবে মানা হয়নি তার দাবি।

দ্রুত ভোট গণনা শেষ করে ফল ঘোষণার দাবি জানিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সিনেট ভবনের সামনে উপস্থিত হন তারা। এ সময় বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও উপাচার্য পতনের আন্দোলনের আভাস দেন অনেকেই। প্রার্থী ও শিক্ষার্থীরা বলেন, নির্বাচনের ফল প্রকাশ বানচালের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। হয়তো নির্বাচন বাতিল করে দেওয়া হবে। 

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) জাবির সদস্য সচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, আমরা দ্রুত ফল চাই। লোকবল বাড়িয়ে ভোট গণনা শুরু করা হোক। মীর মশাররফ হোসেন হল সংসদের ভিপি প্রার্থী জুবায়ের শাবাব বলেন, শুক্রবার (গতকাল) রাত ৮টার মধ্যেই ফল প্রকাশ করতে হবে। যদি না করা হয় তাহলে ভিসির পদত্যাগে আন্দোলন করব। 

বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক এবং জাকসুর জিএস প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের ফল প্রকাশ বানচালের চেষ্টা হচ্ছে। আমরা কোনোভাবেই আপস করব না। আমরা সিনেটের সামনে অবস্থান নিয়েছি। ফলাফল নিয়ে ফিরব। তিনি আরও বলেন, এই ক্যাম্পাস কোনো স্যারের গ্রুপের নয়, কোনো দলের নয়। শিক্ষার্থীরা ৩৩ বছর পর হওয়া জাকসু চায়। আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, আমরা একটি ফেয়ার (নিরপেক্ষ) নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচিত হই বা না হই, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেন তাদের প্রতিনিধি বাছাই করে নিতে পারেন। 

স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি একটি স্বার্থান্বেষী মহল নির্বাচনের ফল স্থগিতের চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন কোনো কিছু করার চেষ্টা করা হলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করব। নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করা হলে আমরা সেটা মেনে নেব না। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সূচি পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। আর ফলাফলে যে রায় আসবে তা আমরা মেনে নেব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী উম্মে হাবীবা বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে নির্বাচনের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি। কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কখন ভোট গণনা শেষ হবে। এভাবে অপেক্ষার কারণে জাকসু নির্বাচনের আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

নির্বাচন কমিশন কমিশন থেকে ৪ শিক্ষকের পদত্যাগ : জাকসু নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক মাফরুহি সাত্তার। গতকাল রাত পৌনে ৯টায় তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন থেকে পদত্যাগের তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমি সবসময় ন্যায়ের পক্ষে ছিলাম। নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন সময় মতামত দিয়েছি, কিন্তু আমার মতামত উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এ জন্য আমি পদত্যাগ করছি। নির্বাচনে বেশ কিছু অনিয়ম হয়েছে, সে জন্য আমি আর থাকছি না।

এর আগে গতকাল নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম খান ও অধ্যাপকশামীমা সুলতানা পদত্যাগ করেন।