মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণসহ ২৩ বিষয়ে নিরঙ্কুশ ঐকমত্য
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ঐকমত্য কমিশনের সংবিধান সংশোধনসহ ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ৩৩টি দল ও জোট ঐকমত্য হয়েছে। এর মধ্যে ২৩টি প্রস্তাবে দুই-তিনটি দল মতামত না দিলেও বিরোধিতা করেনি বা নোট অব ডিসেন্ট দেয়নি। ১৬টি প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে দলগুলো। এর মধ্যে ১০টি প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি। এনসিপি দিয়েছে ১টি প্রস্তাবে। অন্যদিকে ৪১টি প্রস্তাবে একমত নয় দলগুলো। এর মধ্যে জামায়াত ৪টি, বিএনপি ৩টি এবং এনসিপি ১টি প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেছে। জুলাই সনদ পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে আছে।
সনদে দেখা গেছে, প্রস্তাবগুলোর মধ্যে সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে সংস্কার প্রস্তাব ২৩টি। এর মধ্যে রাষ্ট্রভাষা, নাগরিকত্ব ও সংবিধান সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবে ভাষা সংশোধনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা। মাতৃভাষা হিসেবে অন্য ভাষাগুলোকে প্রচলিত ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এই প্রস্তাবে ৩২টি রাজনৈতিক দল একমত।
এ ছাড়া কোনো ধরনের বিরোধিতা ও আপত্তি করা হয়নি যেসব সংস্কার প্রস্তাবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- মৌলিক অধিকারের তালিকা সম্প্রসারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শন, প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা (তবে প্রধান কে হবেন তা নিয়ে মতানৈক্য), জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব (বাস্তবায়নের সময় নিয়ে মতানৈক্য), বিরোধী দল থেকে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি নিয়োগ, আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে আইন, বিচার বিভাগের জনবল বৃদ্ধি, আইনগত সহায়তা ও মধ্যস্থতা সেবা প্রদান অধ্যাদেশ জারি, বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রমাণে শাস্তির বিধান, রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সুবিধাভোগী মালিকানা সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন, দুর্নীতি দমন কমিশনের মেয়াদ চার বছর, দুর্নীতি দমন কমিশন বাছাই কমিটির নাম পরিবর্তন, বাছাই পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রম পর্যালোচনার পদ্ধতি, বেসরকারি খাতের দুর্নীতিকে শাস্তির আওতায় আনা, আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড বাস্তবায়ন, গণহত্যা ও ভোট জালিয়াতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, দুর্নীতিবিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন এবং পরিষেবা খাতের কার্যক্রম ও তথ্য অটোমেশন করা।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
এ ছাড়া ১৬টি প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে দলগুলো; এগুলো হচ্ছে- সংবিধান সংশোধন (বাসদ), জরুরি অবস্থা ঘোষণা (বাসদ), রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও দায়িত্ব (বিএনপিসহ ৮ দল), মূলনীতি পরিবর্তন (গণফোরামসহ ৬ দল), প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান (বিএনপিসহ ৫ দল), দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠন (সিপিবিসহ ৬ দল ও জোট), উচ্চ কক্ষের দায়িত্ব ও ভূমিকা (বিএনপিসহ ৭ দল), সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোটদান (বিএনপিসহ ৬ দল সংবিধান সংশোধন ও জাতীয় নিরাপত্তা বিধানও যুক্ত করতে চায়), প্রধান বিচারপতি নিয়োগ (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ), সুপ্রিমকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ (গণফোরাম), ন্যায়পাল নিয়োগ (বিএনপিসহ ৭ দল), তিনটি সরকারি কর্ম কমিশনে নিয়োগ (বিএনপিসহ ৭ দল), মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগে সংবিধান সংশোধন (বিএনপিসহ ৭ দল), দুর্নীতি দমন কমিশন নিয়োগে সংবিধানে নতুন অনুচ্ছেদ যুক্ত (বিএনপিসহ ৭ দল) এবং সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে সংবিধান সংশোধন (বাসদ স্বতন্ত্রভাবে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে)। এ ছাড়া নির্বাচনে নারী প্রতিনিধিত্ব ৩৩ শতাংশে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট নিয়েছে এনসিপি।
এদিকে চারটি প্রস্তাবে একমত নয় জামায়াতে ইসলামীসহ একাধিক দল। সেগুলো হলো- সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে শক্তিশালী করা ও এখতিয়ার বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অধীনে ন্যস্ত করা এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-এর সংশোধন। এ ছাড়া বিএনপিসহ একাধিক দল যে প্রস্তাবে একমত নয়, সেগুলো হলো- আন্তর্জাতিক চুক্তি আইনসভার উভয়কক্ষে অনুমোদন, সংসদের কমিটি ও সদস্যদের অধিকার নির্ধারণের জন্য আইন এবং তিনটি সরকারি কর্ম কমিশন গঠন। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি গঠনে দ্বিমত পোষণ করেছে এনসিপিসহ ৪টি দল। এ ছাড়া অন্য বেশ কয়েকটি প্রস্তাবে অন্য দলগুলো বিরোধিতা করেছে।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে দলগুলো এখনও একমত হতে পারেনি। রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আগামীকাল ফের আলোচনা করবে ঐকমত্য কমিশন।