বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমকে স্মরণ

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০
শেয়ার :
বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমকে স্মরণ

গানের সুরে, কথনের আবেগে আর যন্ত্রের মাধুর্যে স্মরণ করা হলো বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ছায়ানট মিলনায়তন যেন হয়ে উঠে বাউল ভাবধারার এক উন্মোচন। ভাদ্রের আকাশে মৃদু শিউলি গন্ধের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল শাহ আবদুল করিমের গান- যেন তিনি অদৃশ্য থেকে গানের সুরে ফিরে এসেছিলেন আপন আসরে।

শুরুতেই ছায়ানটের সভাপতি সারওয়ার আলীর কথনে উঠে আসে বাউল সম্রাটের জীবন-দর্শন। তার গান যে কেবল সংগীত নয়, বরং মানবতার বাণী বহনকারী এক চিরন্তন ধ্বনি- তা স্পষ্ট হয়ে উঠল শ্রোতাদের সামনে।

তারপর পর্দা খোলে সুরের ভুবন। ফারজানা আফরিন ইভা গাইলেন- ‘প্রাণ নাথ ছাড়িয়া যাইয়ো না’, আর যেন সমবেত শ্রোতাদের বুকের ভেতর থেকে উঠে আসে নিঃশ্বাসভরা আকুলতা। গানের কথার মতোই সময়ের ব্যস্ততার ভিড়ে মানুষে মানুষে মনের অমিলের আক্ষেপ যেন সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। পরে ইভার সঙ্গেই মিলেমিশে তিনি গাইলেন- ‘জীবন আমার ধন্য যে হায়’। নাজমুল আহ্?সান তুহিনের গানে ভেসে আসে মানবতার আহ্বান- ‘মানুষ হয়ে তালাশ করলে মানুষ’। এ ছাড়া আবুল কালাম আজাদের কণ্ঠে উঠল আক্ষেপ আর বেদনার সুর- ‘মন মজালে ওরে বাউলা গান’ থেকে শুরু করে ‘আগের বাহাদুরী এখন গেল কই’- সব যেন সময়ের নির্মমতার সাক্ষ্য। শেষে বাউল রনেশ ঠাকুর যেন গ্রামবাংলার খোলা আকাশ বুকে নিয়ে গাইলেন- ‘মোদের দিন গেলো গোলমালে’। তার সুরে উঠে আসে মাটির গন্ধ, জীবনসংগ্রামের কাহিনি, আর কালজয়ী বাউল-প্রেম।

পুরো আসরজুড়ে জয়ন্ত রায়ের নেপথ্যের পাঠ ও সঞ্চালনা যেন গানের কথাকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। সন্ধ্যা যখন শেষের দিকে, মনে হচ্ছিল গতকালের আসর আসলে এক অনন্ত যাত্রার ক্ষণিক বিরতি। শাহ আবদুল করিম নেই, কিন্তু তার গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের গভীরে, জীবন আর প্রেমের অবিরাম স্রোতে চিরদিন আছেন লোকগানের এই মহাসাধক।

প্রদর্শনীতে নদীর ছন্দে জীবনের গল্প : এদিকে নদী আমাদের প্রকৃতি, জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদীর প্রবাহ, তীরবর্তী মানুষের জীবন, তাদের সুখ-দুঃখ, আশা ও সংগ্রামকে রঙ, রেখা ও ভিন্নধর্মী শিল্পভাষা নিয়ে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার গ্যালারি জুমে শুরু হয়েছে শিল্পী রুবাইয়া সাওম দিনা’র একক শিল্পপ্রদর্শনী ‘হারমনি’। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় ছিল প্রদর্শনীটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। যেখানে কখনও নদী হয়ে উঠেছে জীবনের সঞ্জীবনী শক্তি, আবার কখনও মৃত্যুসম অন্ধকার-এই দ্বৈত সত্তাকেই শিল্পী দক্ষতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন।

ফরিদপুরে পদ্মানদীর তীরে জন্ম নেওয়া রুবাইয়া সাওম দিনা’র শিল্পচর্চার অনুপ্রেরণা এসেছে শৈশবের নদী-স্মৃতি থেকে। তাই তার কাজের ভেতরে বারবার ফিরে আসে নদীর ছন্দ ও নদীকেন্দ্রিক মানুষের জীবনকথা। প্রদর্শনীতে পারফরমেন্স আর্ট, ভিডিও আর্ট, তেলরং, অ্যাক্রেলিক, জলরং, কালি-কলম ও রেখাচিত্রসহ নানা মাধ্যমে সৃষ্ট শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সোমবার থেকে শনিবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত। আর রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।

শিল্পকলায় ‘গগনে গর্জিছে’ মঞ্চস্থ : এ ছাড়া এদিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় গ্রন্থিক নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত নাটক ‘গগনে গর্জিছে’। এটি দলের দশম প্রযোজনার দ্বিতীয় প্রদর্শনী। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মতিউর রহমান রানা।

নাটকের মূল উপজীব্য-চলমান জীবনের হাসি, কান্না, দুঃখ-বেদনা ও ঘাত-প্রতিঘাত।