ভোট ‘এক বাক্সে’ আনতে সক্রিয় ইসলামি দলগুলো
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের ভোট ‘এক বাক্সে’ রাখার উদ্যোগে গতি আনতে চান ইসলামি দল ও সংগঠনের নেতারা। বর্তমান সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এই কার্যক্রম কিছুটা স্থবির হয়ে আছে। এ নিয়ে খুব শিগগির সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসার চেষ্টা চলছে। শুধু ইসলামি দল ও সংগঠনই নয়, দেশপ্রেমিক ‘বিশেষ’ ব্যক্তিদেরও এই সমঝোতায় রাখার ব্যবস্থা করবে তারা। দল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামি ইসলাম পার্টি এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এ উদ্যোগে একমত হয়েছে। এখন জামায়াত, এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদকে এই সমঝোতায় রাখার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জুলাই হত্যাকা-ের বিচার দাবিতেও অনড় তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে সমঝোতার চেষ্টায় কিছু ইসলামি দল বিএনপি এবং কিছু দল জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। শেষ পর্যন্ত বেশি সংখ্যক ইসলামি দল, সংগঠন ও সমমনাদের কাছে টেনে এই সমঝোতা বা ‘এক বাক্স নীতি’র পরিকল্পনা চলছে। একই সঙ্গে ইসলামি দল ও সংগঠনগুলোর নিজস্ব দর্শন বজায় রেখেই ইসলামি ভাবাদর্শের বাইরে জুলাই অভ্যুত্থানে অবদান রাখা দল ও ব্যক্তিকে জোটে আনার চেষ্টা চলছে। এই লক্ষ্যে ইতোপূর্বে
ইসলামি দলগুলোকে দফায় দফায় বৈঠক করতে দেখা গেছে। আবার বিএনপি ও জামায়াত পৃথকভাবে কিছু ইসলামি দলকে কাছে টানার চেষ্টায় বৈঠক করতে দেখা গেছে। তবে জোট নিয়ে থেমে থেমে আলোচনা ও বৈঠক হলেও কে কার নেতৃত্বে থাকবে, এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা বলছেন, এখানে কোনো নেতা বা সমন্বয়কারী থাকবে না। প্রতিটি দল থেকে দুজন করে প্রতিনিধি সমন্বয় করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামি দলগুলো একক এবং জোটগতভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তা থেকে ইতোমধ্যে বেশকিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। একইভাবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এককভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী চূড়ান্তের ঘোষণা দিয়েছে। আবার বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
অন্যদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টার অংশ হিসেবে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক বৈঠকও করেছে তারা। এক সময় বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ আন্দোলন ও নির্বাচন করেছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসের দুটি অংশ। শেষ পর্যন্ত সব কটি দল ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে বিএনপির জোট ছেড়ে যায়। ২০১৬ সালে প্রথম বিএনপি জোট ছেড়ে যায় প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর দল ইসলামী ঐক্যজোট। শায়খুল হাদিসের দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জোট ছাড়ে ২০২১ সালে। বর্তমানে জামায়াত ছাড়া বাদ বাকি দলগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করছে বিএনপি। শুধু তাই নয়, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও ছারছীনা পীরের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বৈঠক করতে দেখা গেছে।
গত সপ্তাহে রাজধানীর মহাখালীতে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে মাদ্রাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে ২০ হাজার দরবার, ২০ হাজার প্রতিষ্ঠান ও ৫৫ লাখ ছাত্র-ছাত্রীর প্রতিনিধিত্বকারী দল বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এএমএম বাহাউদ্দীন বিএনপির সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, ইসলামপন্থিÑ সব মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। হাটহাজারী মাদ্রাসায় গিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমিরের সঙ্গে কথা বলেছি। ছারছীনা পীরের সঙ্গে দেখা করেছি। আলিয়া মাদ্রাসা ধারার যেসব মুরব্বি আছেন, তাদের সঙ্গেও দেখা করে কথা বলেছি। উদ্দেশ্য একটাই, আমরা সব জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে এমনভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাই; যেখানে বিভক্তি থাকবে না।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার দলের কর্মসূচি শেষ করে বরিশালে চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বর্তমানে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছে জামায়াত। আবার জামায়াতের সঙ্গেও কিছু দল যোগাযোগ রাখছে। এর মধ্যে কিছু রাজনৈতিক দলের আদর্শিক বিরোধ থাকলেও জুলাই সনদ, সংস্কার ও নির্বাচনের প্রশ্নে তারা সমঝোতায় আসতে চায়। শুধু জামায়াত নয়, অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এসব দলের নেতারা।
সমঝোতার বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম আমাদের সময়কে বলেন, ইসলামি ভাবাপন্ন এবং দেশপ্রেমিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তি নিয়ে সমাঝোতার চিন্তা অনেক দিনের। এতে জামায়াত, এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদকে কাছে চায় তারা। তবে নির্বাচনের আগে সংস্কার ও জুলাই হত্যাকা-ের বিচার চায়। সংস্কার ও বিচার করে যদি ডিসেম্বরেও নির্বাচন হয় তাতেও আপত্তি নেই। তবে সংস্কার ও বিচারের আগে কোনোভাবেই নির্বাচন নয়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
ইসলামি আন্দোলনের একজন নেতা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামি ইসলাম পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের সঙ্গে তাদের আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, ইসলামি দলগুলো নিয়ে আমরা একটি বৃহত্তর ইসলামি ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছি। এ নিয়ে আলোচনা চলছে।
ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, ইসলামি দলগুলোর একটা বাক্স হোক, এটা আমরা চাই। বর্তমানে ভিন্ন পপরিস্থিতির কারণে এই আলোচনা থেমে আছে। তবে শিগগির সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বসার চেষ্টা চলছে।