চার পণ্যের উচ্চমূল্যে চিঁড়েচ্যাপ্টা নিম্নবিত্ত
নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে দরকারি চার পণ্য চাল, ডাল, আটা ও ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেজায় চাপে আছেন নিম্নবিত্তরা। বাড়তি এই খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্তরাও। চাল ও সয়াবিন তেলের বাজার লম্বা সময় ধরেই চড়া। সম্প্রতি আটা এবং ডালের দামও বেড়েছে। অন্যদিকে সহজলভ্য আমিষের উৎস ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও পাঙাশ মাছের দামও বাড়তি। এসব পণ্যও হিসাব করে কিনতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষকে। বছরের ব্যবধানে এসব পণ্যের পেছনে ব্যয় বাড়ায় সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে তাদের।
প্রতিদিনের রাজধানীর খুচরা বাজার পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিত প্রতিবেদন দেয় সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সেখানেও উঠে এসেছে মূল্যবৃদ্ধির চিত্র। সংস্থাটির গতকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত মাঝারি চালের দাম এক বছরের ব্যবধানে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের এই সময় খুচরা বাজারে যে মাঝারি চালের কেজি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে, এখন তা ৬০ থেকে ৭৫ টাকায় কিনে খেতে হচ্ছে। এদিকে দরিদ্রের মোটা চাল এই সময়ে সাড়ে ৭ শতাংশ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সরু চালের দামও বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ।
চালের বিকল্প আটা। গত বছর এই সময় খোলা আটার কেজি ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি
হয়েছিল। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা। প্যাকেটজাত আটার কেজিও ৫০ থেকে ৫৫ টাকার স্থলে এক বছর বাদে এখন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ময়দার দামও বেড়েছে।
আরও পড়ুন:
রাজধানীতে কিশোরীসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
সয়াবিন তেলের দামও বছরের ব্যবধানে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি রয়েছে। টিসিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, খোলা সয়াবিনের লিটার গত বছর এই সময় বিক্রি হয়েছে ১৪৮ থেকে ১৫৮ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ থেকে ১৭৪ টাকায়। এক লিটারের বোতলের সয়াবিনের দাম এখন ১৮৮ থেকে ১৯০ টাকা। যেখানে গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৬৭ টাকা। পাম তেলের দাম আরও বেশি বেড়েছে। এক বছরে পাম ও পাম সুপার তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৬ দশমিক ৩৬ থেকে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
আবার এক বছরের ব্যবধানে মসুর ডালের দামও ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গত বছর ছোট দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। মাঝারি দানার মসুর বিক্রি হয়েছিল ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যদিও মোটা দানার মসুরের দাম অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে।
কদমতলী এলাকার বাসিন্দা গাড়িচালক মো. মমিন বলেন, ‘ড্রাইভারি করে যে সামান্য টাকা আয় করি, তা দিয়ে অনেক হিসাব করে চলতে হয়। মাছ-মাংস তো পরে। চাল, ডাল, তেল, আটার দাম বাড়লেই যে চাপে পড়তে হয়; অন্য জিনিসপত্র কিনব কীভাবে। বর্তমানে চালের যা দাম, সেইটাই সামাল দিতে কষ্ট হয়। আবার তেল ছাড়া রান্না হয় না। এটার পেছনেও মেলা খরচ। কোনটা রেখে কোনটা সামলাব, কুল পাই না।’
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা গৃহকর্মী সালেহা বেগম বলেন, ‘বাসাবাড়িতে কাজ করে সীমিত যে আয়, তা দিয়া এখন চাল, ডাল, তেল, তরিতরকারি কিনতেই টান পড়ে যায়। মোটা চালের দামও যে হারে বাড়ছে, কীভাবে চলব। শাকসবজির দামও এখন অনেক। মুরগি, ডিম, মাছ কিনে খাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে।’
আরও পড়ুন:
নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে এলডিপি?
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাংসের বাজারে গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই আকাশচুম্বী। ব্রয়লার মুরগির কেজিও এখন দাম বেড়ে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ফার্মের ডিমের ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির প্রতিবেদন বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ বাড়তি রয়েছে। তবে ফার্মের ডিমের দাম গত বছরের এমন সময়ের চেয়ে ১১ শতাংশ কম রয়েছে। গত বছর এমন সময়ে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল। ফার্মের ডিমের হালি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।
এদিকে বাজারে কম দামের মধ্যে পাঙাশ মাছের কেজি আকারভেদে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। বছরের ব্যবধানে এসব মাছের দামও বাড়তি রয়েছে। অন্যান্য চাষের মাছও কিনে খেতে কষ্ট হচ্ছে দরিদ্রের।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, বছরের ব্যবধানে বাজারে নিত্যপণ্যের পেছনে খরচ বাড়লেও ভোক্তার মজুরি বাড়ছে না। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না। স্বল্প আয়ের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ সবচেয়ে বেশি। তাই চাল, ডাল, তেলের মতো দরকারি পণ্যের দাম বাড়লে কষ্ট অনেক বেড়ে যায়। বাজারে যাতে এসব পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়তে না পার সেদিকে সরকারের লক্ষ রাখতে হবে। ভালো উৎপাদনের পরেও অনেক বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। আবার বিশ্ববাজারে দাম কমা স্ত্বেও সয়াবিন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে- এমনটা হওয়া যাবে না। বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে।